পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলমান ও ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবুবকর (রা.)। যিনি মুসলিম মিল্লাতের কাছে সিদ্দিক (সত্যবাদী) হিসেবে প্রসিদ্ধ। কারণ, তিনি সর্বদাই সত্য কথা বলতেন। সৎকাজের প্রতিযোগিতায় তিনি সকলের চাইতে অগ্রগামী ছিলেন।
যে সকল সৌভাগ্যবান সাহাবি সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) তাদের মধ্যে অন্যতম। আবু বকর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে হুজুর (সা.) নিজে বলেন, আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি তার মধ্যেই এক প্রকার দ্বিধা- দ্বন্দ্ব অবস্থা দেখতে পেয়েছি। কিন্তু যখন আবু বকরের সামনে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছি তখন তিনি কোনোরূপ সংকোচ বোধ না করে সাথে সাথেই ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মোহাম্মদ (সা.) -এর বিপদ-আপদের সাথী। মোট কথা হলো, বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.) -এর পরে মানবজাতির মধ্যে আবুবকর সিদ্দিক (রা.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।
প্রথমে তিনি একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের সাহায্যার্থে এ সবকিছু খরচ করতে করতে এমন অবস্থায় উপনীত হলেন যে, হুজুর (সা.) একবার সাহাবিদের কাছ থেকে এক যুদ্ধের জন্য অনুদান আদায়ের সময় আবুবকর সিদ্দিক (রা.) ঘরে যা ছিল সম্পূর্ণ এনে রাসুলের সামনে পেশ করলেন। হুজুর (সা.) বললেন, আবুবকর! ঘরে কি রেখে এসেছেন? উত্তরে বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলকে। অর্থাৎ ঘরে যা ছিল তাই নিয়ে এসেছেন।
ইসলামের জন্য আবুবকর (রা.) -এর ত্যাগ তিতিক্ষা ছিল সীমাহীন। হুজুর (সা.) বলেন, আমার উপর যার যতো এহসান ছিল, প্রত্যেকের প্রতিদানই আমি দিয়ে দিয়েছি কিন্তু আবুবকর (রা.) -এর প্রতিদান বাকি রয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন নিজ হাতে আমার আবুবকরের প্রতিদান দান করবেন।
হুজুর (সা.) এর ওফাতের পর যখন মুসলমানদের খলিফা (রাষ্ট্রপ্রধান) নিযুক্ত করা হল, তখন ভোরে কিছু কাপড় নিয়ে বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে যেতে উদ্যত হলেন, উমর (রা.) তা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন কোথায় যাচ্ছেন?
উত্তরে তিনি বললেন, আমাকে তো রাষ্ট্রপ্রধান করে মুসলমানদের কাজে নিযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমার পরিবার পরিজন রয়েছে, তাদের খানাপিনার ব্যবস্থাও তো করতে হবে, তাই বাজারে যাচ্ছি কাপড় বিক্রি করার জন্য। হজরত আবু উবায়দা (রা.) ছিলেন রাষ্ট্রের কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত।
উমর (রা.) বললেন, আসুন আমরা তার কাছে যাই। তিনি আপনার জন্য কিছু ভাতা ঠিক করে দেবেন।
আবু উবায়দা (রা.) বললেন, একজন সাধারণ মুহাজির সাহাবির ভাতা যে পরিমাণ আপনাকে ও তাই দেওয়া হবে।
বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, যে পরিমাণ ভাতা আবুবকর (রা.) -এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা উনার সংসার পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ না করে তিনি সাধারণ ভাবেই জীবন যাপন করেছিলেন।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে তিনি সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
একবার আবুবকর সিদ্দিক (রা.) -এর স্ত্রী হজরত উম্মে রুমান (রা.) তার স্বামীকে বললেন, বাচ্চাদের মিষ্টান্ন খেতে মন চেয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান স্বামী উত্তর দিলেন, আমার নিকট তো এতো পয়সা নেই যা দিয়ে তোমাদের জন্য মিষ্টান্ন ক্রয় করে খাওয়াতে পারি।
স্ত্রী বললেন, আমরা যদি দৈনিক খরচ থেকে সামান্য সামান্য বাঁচিয়ে রাখি, তাহলে তা দিয়ে মিষ্টান্ন ক্রয় করে আনতে পারব। কিছুদিন পর কিছু পয়সা বাঁচিয়ে স্বামীর হাতে দিলেন মিষ্টান্ন আনার জন্য।
কিন্তু আবুবকর (রা.) বললেন, তুমি যেহেতু এই পরিমাণ পয়সা বাঁচিয়ে রাখতে পারলে, তাহলে বোঝা গেল এই পরিমাণ পয়সা ছাড়াও আমার সংসার চলতে পারে। তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দিকে গেলেন এবং তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে বললেন, আগামী মাস থেকে আমার ভাতা এই পরিমাণ কমিয়ে দিবে। কারণ, এই পয়সা ছাড়াও আমার সংসার চলতে পারে।
ইন্তেকালের পূর্বে আবুবকর সিদ্দিক (রা.) তার কন্যা হজরত আয়েশা (রা.) কে বললেন, আমি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার সুবাধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমাকে দুধাল উটনিটি, তরকারির পেয়ালা এবং এই চাদরটি দেওয়া হয়ে ছিল। আমার ইন্তেকালের পর হজরত উমর (রা.) এর নিকট উক্ত জিনিসগুলো পৌঁছিয়ে দিবে।
উল্লেখিত ঘটনাটি দ্বারা বুঝা যায়, হজরত আবুবকর (রা.) রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহারে কি পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
তিনি ছিলেন একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক। আজও বিশ্বজুড়ে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান আবুবকর সিদ্দিক (রা.) এক রুল মডেল।
(আমাদের সময়.কম)
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment