১৯৯৫ সালে শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেরপুর সদর থেকে ২৮ এবং ঝিনাইগাতি
উপজেলা থেকে আট কিলোমিটার উত্তরে কাংশা ইউনিয়নে গজনী পাহাড়ের প্রায় ৯০ একর
পাহাড়ি টিলায় ‘গজনী অবকাশ কেন্দ্র’ নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।
সমতল ভূমি থেকে অবকাশ ভবনে ওঠা-নামা করার জন্য পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে
অত্যন্ত আকর্ষণীয় আঁকাবাঁকা ‘পদ্ম সিঁড়ি’। পদ্ম সিঁড়ির পাশেই গজারি বনে
কাব্যপ্রেমীদের জন্য কবিতাঙ্গনের গাছে গাছে ঝোলানো আছে প্রকৃতিনির্ভর রচিত
কবিতা। পাহাড়ের ঢালে, গায়ে অথবা পাহাড় চূড়ায় সারি
সারি শাল, সেগুন, মহুয়া, গজারী, আকাশমনি, ইউকেলিপটাস, মিলজিয়ামসহ আরো নাম
না জানা কত শত পাহাড়ি গাছ, বনফুল ও ছায়াঢাকা বিন্যাস যেন বিশাল ক্যানভাসে
সুনিপুণ শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়। শিল্পীর এ আঁচড় খুব সহজেই প্রকৃতিপ্রেমীদের
হৃদয়ে দোলা দিয়ে যেতে পারে বলেই প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে
হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ সবাই ছুটে আসেন
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী গারো পাহাড়ের মন ছুঁয়ে যাওয়া
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে।
ভারতের
মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে ও বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে অরণ্যরাজি আর গারো
পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড়ি নদী ভোগাই, চেল্লাখালি, মৃগী, সোমেশ্বরী, মালিঝি,
মহারশীর ঐশ্বরিক প্রাচুর্যস্নাত অববাহিকায় সমৃদ্ধ জনপদ শেরপুর। এ জেলার
বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি। লাল মাটির উঁচু পাহাড়। গহীন জঙ্গল,
টিলা, মাঝে সমতল। দু’পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ছন্দ তুলে পাহাড়ী ঝর্ণার এগিয়ে
চলা। পাহাড়, বনানী, ঝরণা, হ্রদ এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেও কৃত্রিম
সৌন্দর্যের অনেক সংযোজনই রয়েছে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে।
নিম্নে এর বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দেওয়া হলঃ
ডাইনোসরঃ
উচ্চতা
৩৩ ফুট। নির্মাণ কাল ২০০৬, পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মোঃ আবু বকর সিদ্দিক,
জেলা প্রশাসক, শেরপুর। নির্মাতা ভাস্কর হারুন অর রশীদ খান। এটি একটি বৃহৎ
ভাস্কর্য যা দেখে আমরা পৃথিবীর বিবর্তনের ইতিহাস জানতে পারি।
ড্রাগনঃ
এটি
একটি স্থাপত্যধর্মী ভাস্কর্য। পৃষ্ঠপোষকতায় জনাব নওফেল মিয়া, জেলা
প্রশাসক, শেরপুর। ড্রাগনের মাথা দিয়ে প্রবেশ করে ভিতর দিয়ে বের হয়ে যাওয়া
একটা অন্যরকম অনুভূতি ।
জলপরীঃ
ঝিলের
পাড়ে নির্মিত জলপরি। দেখে মনে হয় জল থেকে সদ্য উঠে এসে শ্রান্ত ক্লান্ত
অবস্থায় বসে আছে। সাদা সিমেন্টে নির্মিত ভাস্কর্যটি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন
নওফেল মিয়া, জেলা প্রশাসক, শেরপুর। নির্মাতা ভাস্কর রায়হান ও শীষ ।
ফোয়ারাঃ
গ্রীক
ধারায় তৈরী চৌবাচ্চার দুইটি হাঁস এবং পানির খেলা। নির্মাণকাল ২০০৮।
পৃষ্ঠপোষকতা ও বাস্তবায়নে জনাব সামছুন্নাহার বেগম, জেলা প্রশাসক, শেরপুর।
এর নির্মাতা ভাস্কর মোঃ হারুন অর রশীদ খান।
দন্ডায়মান জিরাফঃ
উচ্চতা ২৫ ফুট। নির্মাণকাল ২০০৮। এটি গজনীর অন্যতম বৃহৎ ভাস্কর্য। জেলা প্রশাসক সামছুন্নাহার বেগমের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি নির্মিত হয়।
ওয়াচ টাওয়ারঃ
সুউচ্চ
শীর্ষ পাহাড় চূড়ায় নির্মিত হয়েছে আধুনিক স্থাপত্য রীতিতে ৬৪ ফুট উচ্চতা
সম্পন্ন নয়নকাড়া ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’। এ টাওয়ারের চূড়ায় উঠে এলে চারদিকে শুধু
দেখা যায় ধূসর, আকাশী ও সবুজের মিতালি।
পদ্ম সিড়িঃ
এটিও
জনাব নওফেল মিয়ার চিন্তা-চেতনা থেকে তৈরি হয়েছিল। সিঁড়ি বেয়ে আকাশ পানে
ওঠা এক অন্যবদ্য সৃষ্টি। রেস্ট হাউস থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য
আঁকাবাঁকা প্রায় দু’শতাধিক সিঁড়িসহ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ‘পদ্ম সিড়ি’ রয়েছে।
‘পদ্ম সিড়ি' এর পাশেই গজারী বনে কাব্য প্রেমীদের জন্য কবিতাঙ্গনের গাছে
গাছে ঝোলানো আছে প্রকৃতিনির্ভর রচিত কবিতা। পাহাড়ের পাদদেশে বর্ষীয়ান
বটবৃক্ষের ছায়াতলে শান বাঁধানো বেদীসহ বিশাল চত্ত্বর।
কিভাবে যাওয়া যায়:
শেরপুর থেকে আনুমানিক দূরত্ব = ৩০ কি:মি:
বাসভাড়া= ৫০ টাকা।
সিএনজি ভাড়া = ২৫০ টাকা।
এখানে আসার জন্য সড়ক পথে যাতায়ত খুব সহজ। গজনী অবকাশ পর্যন্ত রয়েছে সড়ক
ও জনপথ বিভাগের মসৃণ পিচঢালা পথ। রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে
যাতায়াতই সবচেয়ে উত্তম। উত্তরবঙ্গ থেকে টাঙ্গাইল-জামালপুর হয়েও আসতে
পারেন সড়ক পথে। শেরপুর শহর থেকে গজনীর দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। ঢাকা
থেকে সরাসরি মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেট কারে গজনী অবকাশ যেতে পারেন। ঢাকা
থেকে নিজস্ব বাহনে মাত্র সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টায় ঝিনাইগাতীর গজনী
অবকাশে আসা যায়।
এ ছাড়া ঢাকার মহাখালি থেকে ড্রিমল্যান্ড বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া
২৫০টাকা। মহাখালী থেকে দুপুর ২টায় ছাড়ে এসিবাস। ভাড়া ৩৫০টাকা। এছাড়া
ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়াম ৪ নং গেইট থেকে সরাসরি বিকাল ৩-৪টায়
শিল্প ও বণিক সমিতির গাড়ী ঝিনাইগাতীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ভাড়া ৩০০টাকা ।
যারা ড্রিমল্যান্ডে আসবেন, তারা শেরপুর নেমে নিউমার্কেট থেকে মাইক্রোবাস
৫০০ টাকায় সোজা গজনী যেতে পারবেন। শেরপুর থেকে লোকাল বাস,টেম্পু, সিএনজি
অথবা রিক্সায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে যাওয়া যায়।
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment