Friday, November 22, 2019

হজের গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান

হজ ইসলামি জীবন বিধানের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম। হজের প্রতিটি কাজ ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ও খুবই তাৎপর্যবহ। সর্বপ্রথম বাইতুল্লাহ শরিফের হজ আদায় করেন হজরত আদম (আ.)। এরপর হজরত নুহ (আ.) থেকে শুরু করে সকল নবী-রাসুল কাবা শরিফের জিয়ারত ও তাওয়াফ করেন। কাবা শরিফ পুনর্নির্মাণের কাজ সমাপ্তির পর মহান রাব্বুল আলামিন জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে হজরত ইব্রাহিম (আ.) কে এই পবিত্র গৃহের তওয়াফ ও হজ করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও ঈসমাইল (আ.) উভয়েই তাওয়াফসহ হজের যাবতীয় আহকাম পালন করেন। এরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হুকুম দিলেন, ‘হে ইব্রাহীম! তুমি পুরো পৃথিবীর মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা ছড়িয়ে দাও। এই বিষয়ে আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা হজরত ইব্রাহিম (আ.) কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেটে। সব ধরণের ক্ষীণকায় উঠের পিঠে। তারা আসবে বহুদূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সুরা হজ: ২৭)

হজের ফাজায়েল ও মাসায়েল
হজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কীয় অসংখ্য আয়াত ও হাদিস উল্লেখ রয়েছে। প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তুমি হাজিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন তুমি তাকে সালাম করবে, মুসাফাহা করবে এবং তার বাড়িতে প্রবেশের আগে তাকে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুরোধ করবে। কেননা তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত।’ (আহমদ: ২৫৩৮) এমনিভাবে হুজুর (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির নিমিত্তে হজ করে এবং মাঝে কোন ধরণের অনর্থক কথা-বার্তা ও গুণাহের কাজে লিপ্ত না হয়,তখন সে এমনভাবে পবিত্র হয়ে প্রত্যাবর্তন করে যেমন কোন বাচ্চা তার মার গর্ভ থেকে পূর্ণ নিষ্পাপ ও পবিত্র হয়ে দুনিয়াতে এলো।(বোখারি: ১৪৪৯) হাজিগণ আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত মেহমান। তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের সঙ্গে কোন সম্মানিত হাজির সাক্ষাত হয়, তখন তাকে নিজ ঘরে আনার পূর্বে তাকে সালাম দাও, মুসাফা করো এবং তার কাছে স্বীয় মাগফিরাতের জন্য দোয়া চাও। কেননা সে এখন এ অবস্থায় আছেন যে তার সব গুণাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। ( মুসনাদে আহমদ: ২৫৩৬) হজের নেকী হল অসহায় লোকদের খানা খাওয়ানো আর অত্যন্ত নরম ভাষায় কথা বলা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজে মাবরুর অর্থাৎ মাকবুল হজের প্রতিদান জান্নাতই। হুজুর সাল্ললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, হজের নেকী কি? রাসূল (সা.) বললেন, অসহায়দের খানা খাওনো আর নরম ভাষায় কথা বলা। (মুসনাদে আহমাদ: ২৫৪২)

হজ তিন প্রকার। ১. তামাত্তু। ২. কিরান। ৩. ইফরাদ। এই তিন প্রকারের মধ্যে যেকোনো একটি করার অবকাশ আছে। তবে মিকাতের ভেতর অবস্থানকারীরা হজে ইফরাদ করবে। হজ্বে তামাত্তু: মিকাত থেকে কেবল উমরার ইহরাম বাঁধবে। উমরার তওয়াফ এবং সায়ী করবে। চুল মুন্ডিয়ে ইহরাম খুলে ফেলবে। জিলহজ মাসের ৭/৮ তারিখে হজ্বের জন্য ইহরাম বাঁধবে। জিলহজের ৮ তারিখে তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনাতে গিয়ে ঐ আমল করবে, যা হজের ছয়দিনে করা হয়।

হজ্বে কিরান: মিকাত থেকে হজ এবং উমরা উভয়টা এক সঙ্গে ইহরাম বাঁধবে। উমরার তওয়াফ এবং সায়ী করবে। আর ইহরাম অবস্থায় থাকবে। ইহরামের নিষেধ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। ৮ই জিলহজ্বে তালবিয়া পড়তে মিনাতে গিয়ে সেই আমল করবে যা হজের ছয় দিনে উল্লেখ আছে। হজ্বে ইফরাদ: মিকাত শুধু হজের ইহরাম বাঁধবে। তওয়াফে কদুম করবে। ইহরাম অবস্থাই থাকবে। ইহরামের নিষেধ থেকে বেঁচে থাকবে। ৮ই জিলহজ্বে তালবিয়া পড়তে মিনাতে গিয়ে সেই আমল করবে যা হজ্বের ছয় দিনে উল্লেখ আছে।

হজ ফরজ হওয়ার শর্তসমূহ
মুসলমান হওয়া, ২. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া, ৩. বালেগ হওয়া, ৪. স্বাধীন হওয়া, ৫. হজের সময় হওয়া, ৬. মধ্যম ধরনের ব্যয় হিসেবে সফরের ব্যয় বহনের সামর্থ্য থাকা, যদিও হজ পালনকারী মক্কা শরিফে অবস্থান করে। ৭. যারা মক্কা শরিফের বাইরে থাকেন তাদের জন্য হজ পালনের শর্ত হলো মালিকানা বা ভাড়া সূত্রে স্বতন্ত্রভাবে একটি বাহন বা অন্য কিছু ব্যবহারের সামর্থ্য থাকা যেমন, আমাদের দেশের হাজিরা বিমান ব্যবহার করে থাকেন। ৮. অমুসলিম দেশে মুসলমান ব্যক্তির ‘হজ ইসলামের একটি রুকন’ এ কথা জানা থাকা।

হজ ওয়াজিব হওয়ার শর্তসমূহ
সুস্থ থাকা, ২. হজে যাওয়ার বাহ্যিক বাধা না থাকা, ৩. রাস্তা নিরাপদ হওয়া, ৪. মহিলারা নিজ ইদ্দত অবস্থায় না থাকা, ৫. নারীর সঙ্গে একজন মুসলমান আস্থাভাজন, জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ মাহরাম পুরুষ থাকা। হজের রুকন দুটি: ১. ইহরাম বাঁধা। ২. মুসলমান হওয়া।

হজের ফরজসমূহ
ইহরাম বাঁধা। ২. আরাফায় অবস্থান। ৩. তওয়াফে যিয়ারত। ৪. অনেক উলামায়ে কেরাম সায়ী করাও ফরজ বলেছেন।

সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

“পানতুমাই” বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম হচ্ছে “পানতুমাই”। নয়নাভিরাম, নান্দনিক, অপূর্ব, হৃদয়স্পর্শী সবগুলো শব্দই এই নামের সঙ্গে লাগালেও এর সৌন্দর্যের বিশ্লেষণ শেষ হবে না। বাংলাদেশেই যে এত চমৎকার একটি গ্রাম আছে তা অনেকেরই অজানা। রূপের শহর, রূপের নগরী বলে অনেক শহরেরই খেতাব আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশের ছোট্ট একটি অনিন্দ্য সুন্দর গ্রামের কোন খেতাব নেই।
বাংলাদেশের কোল ঘেঁষে প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের কোলে বাংলাদেশের বুকে নেমে এসেছে অপরূপ এক ঝর্ণাধারা, যার কুল কুল ধ্বনি মনকে দুলিয়ে দিয়ে যায়। ঝর্ণাটির স্থানীয় নাম ফাটাছড়ির ঝর্ণা, কেউ কেউ একে ডাকেন বড়হিল ঝর্ণা বলে। ঝর্ণাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে পড়লেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায় ঝর্ণাটির অপূর্ব রূপ সুধা। পাশেই বিএসএফের ক্যাম্প, বরইগাছের সারি দিয়ে এখানে দুই দেশের সীমানা ভাগ করা। এখানে বিজিবির কোনো চৌকি নেই, তাই সীমানার কাছাকাছি যাওয়া বিপদজনক। কাছাকাছি না গিয়েও ঝর্ণাটির মোহনীয় সৌন্দর্য্য রস উপভোগ করতে পারবেন প্রাণভরে।

পানতুমাই সিলেট জেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রাম যা ভারত সীমান্তের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। পানতুমাই গ্রামকে যদিও অনেকে “পাংথুমাই” বলে ডাকে কিন্তু এর সঠিক উচ্চারণ “পানতুমাই”। পথের শেষ নেই, পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তাই পানতুমাই গ্রামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে সহজেই হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে।

গ্রামের শেষে পাহাড়ি গুহা থেকে হরিণীর মতোই লীলায়িত উচ্ছল ভঙ্গিমায় ছুটে চলেছে সঠিক নাম না জানা ঝর্ণার জলরাশি। ছিটকে পড়ে মেলে ধরেছে তার রূপের মাধুরী। ভ্রমণ প্রিয়াসু মানুষদের ঝর্ণার কাছাকাছি যাওয়া নিষেধ। অনেক আগে ঝর্ণার কাছে যাওয়াও যেত, ঝর্ণার পানিতে নেমে গোসলও করা যেত, বিএসএফ এর ক্যাম্প ছিল না সেই সময়। কিন্তু বাঙালি আর খাসিয়া মারামারি হওয়ার কারণে এখন ঝর্ণার কাছাকাছি যাওয়া নিষেধ। তবে নিরাপদ দূরত্ব রেখে এর অপরূপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করা যাবে।

কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন
সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে যাবেন গোয়াইনঘাট থানা সংলগ্ন বাজারে। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। সেখান থেকে আরেকটি সিএনজিতে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পাংথুমাই বা পানতুমাই যেতে ভাড়া লাগে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। পানতুমাইয়ে কোনো খাবার হোটেল বা থাকার ব্যবস্থা নেই সুতরাং শুকনা খাবার অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। রাতে থাকতে চাইলে স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে থাকতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার ২০০-৩০০ টাকা ব্যয় হতে পারে।

- জাগরণীয়া ডেস্ক
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

Sherpur (Bengali: শেরপুর জেলা)

Digital Map - Sherpur Sadar (Upazila & Road Map).

Sherpur (Bengali: শেরপুর জেলা, Sherpur Jela also Sherpur Zila) is a district in central Bangladesh. It is a part of Mymensingh Division. Sherpur district was formerly a sub-division of Jamalpur district. It was upgraded to a district on February 22, 1984. Sherpur city is located about 198 km (123.03 mi) north of Dhaka which is the capital of the country.
Sherpur district is bounded on the north by India, on the east by Mymensingh district, on the south and west by Jamalpur district.

Sherpur region was a part of the kingdom of the Kamarupa in the ancient time. During the reign of the Mughal Emperor Akbar this area was called "Dashkahania Baju". During the first part of the seventeenth century the Gazis of Bhawal occupied Dashkahania area from the descendants of Isa Khan. Doshkahania Pargana was named Sherpur after Sher Ali Gazi, the last jaghirdar of the Gazi dynasty. Fakir-Sannyasi Revolts were held against the East India Company and the local zamindars from the time of warren hastings to lord cornowalis; Tipu Shah, leader of the Fakir Movement, declared sovereignty in the area and established his capital at Gajripa. Peasant conferences were held in 1906, 1914 and 1917 at Kamarer Char of Sherpur under the leadership of Khos Muhammad Chowdhury. The communists revolted against the systems of Nankar, Tonk, Bhawali, Mahajani, Ijaradari during 1838-48 in Sherpur. In 1897 a devastating earth quack changed the course of the Brahmaputra towards the west and forced to merge it with the Jamuna; it also caused serious damages to many old buildings.

The annual average temperature of this district varies from maximum 33.3 °C to minimum 12 °C.The annual rainfall is 2174 mm.
The Old Brahmaputra, Mrigi, Malijee, Bhogai, Chellashali and Maharashi is main rivers.
The district consists of 5 upazilas (sub-district), 52 unions, 458 mauzas, 695 villages, 4 paurashavas, 36 wards and 99 mahallas.The upazilas are:
1. Jhenaigati Upazila
2. Nakla Upazila
3. Nalitabari Upazila
4. Sherpur Sadar Upazila
5. Sreebardi Upazila
Mass killing site (1971): Ahmednagar (Jhenaihati), Jhaughara (Sherpur), Bidhaba Para (Nalitabari), Kayari Road (Jhenaigati) are the testimony of War of Liberation of this district.
Garo, Koch, Hajong, Banai and Rajbanshi are the ethnic nationals of this district. These ethnic nationals have their own languages in this area.

The numbers of educational institutions of this district are Government college 3, non-government college 16, government high school 3, non-government high school 146, junior high school 27, government primary school 358, non-government primary school l46, madrasah 292, agricultural training institute 1, nursing training institute 1, vocational training institute 1.
The numbers of cultural organizations of this district are club 93, public library 4, drama stage 3, theatre group 15, literary society 5, women's organisation 30, cinema hall 13, shilpakala academy 1 and shishu academy 1.

The economy of Sherpur is mainly agro based, although non-farm economic activities performing a substantial share in the development oriented program of the district. Out of total 335,460 holdings of the district, 60.12% holdings are farms that produce varieties of crops namely local and HYV rice, wheat, jute, mustard, potato, pulses, different kinds of vegetables, tobacco and others. Various fruits like banana, mango, black berry, coconut, betel nut, date, jackfruit, palm, jambura, bel, papaya, boroi, kamranga, ataphal etc. are grown. Fish of different varieties are abound in this district and as in other parts of the country. Varieties of fish are caught from rivers, tributary channels and creeks. The popular fresh water fishes comprise ruhi, catla, mrigel, kalbaus, chital, boal, airh, pangas, gazar, shoul, pabda, koi, shing, phali, bele, tengra etc. Besides, newly introduced exotic varietes of fishers are tilapia, nilotica, silver carp, grass carp etc. Besides crops, livestock and fishery are the main source of household income. Non-agricultural activities also play an important role in the economy of the district.

• From Wikipedia, the free encyclopedia, This page was last edited on 21 July 2017, at 15:14.

সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

সবুজের সমারোহ শেরপুরের নেওয়াবাড়ি টিলা

শেরপুরের নেওয়াবাড়ি টিলাকে ঘিরে চমৎকার একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজর নেই। পর্যটনকেন্দ্রের সম্ভাবনাময় এ জায়গাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেষা। এ কারণে এর বাড়তি একটি আকর্ষণ রয়েছে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে।

শেরপুরের শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় প্রাকৃতি সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। নেওয়াবাড়ি টিলায় আছে প্রায় ৭০ হেক্টর জমি। এর চূড়ায় উঠলে দেখা যায় চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ। জনশ্রুতি আছে এখানে অনেক আগেই একটি বাড়ি ছিল। এ বাড়ির নাম ছিল নেওয়াবাড়ি। সেই থেকেই এ টিলার নামকরণ করা হয় নেওয়াবাড়ির টিলা। তবে এখন আর সেই বাড়ি নেই। আছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন প্রজাতির লতা ও বৃক্ষ। স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘নেওয়া’। এ কারণেই টিলাটি নেওয়াবাড়ি টিলা হিসেবে পরিচিতি।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের আওতায় এ টিলা। এখানকার গাছগুলো ভূমি দস্যুরা কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে। আশির দশকে গড়ে ওঠে উডলট বাগান। এ টিলার চারদিকে স্থানীয় বাঙালিদের পাশাপাশি গারো, কোচ, হাজং, বানাই গোত্রের লোকজন বসবাস করেন। সকলের মধ্যে রয়েছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। টিলার দণি পাশে আছে ছোট পাহাড়ি ঝরনা। কোথাও গহীন জঙ্গল। আবার কোথাও কোথাও দেখা যাবে পাহাড় চূড়া। আরও দেখা যাবে ওপারের সীমানায় সূর্যোদয় ও সূযার্স্ত। পায়ে হেটে চারদিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে মনোরম পাহাড়ি পরিবেশ।

পাহাড়ের বিরাট এলাকা জুড়ে আছে আকাশ মনি, বেলজিয়াম, ইউক্যালিপটাস, রাবার গাছ, ওষুধী গাছ ও কড়ই এছাড়াও নানা জাতের লতাগুল্ম আর বাহারি গাছ-গাছালি যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বিশেষ করে এ টিলার পাহাড়ে উঠে এলে দূরের আকাশকেও কাছে মনে হয়। সবুজ ও হালকা নীলের নৈসর্গিক এই দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেওয়াবড়ি টিলায় পর্যটনকেন্দ্র করা গেলে স্থানীয়রা উপকৃত হতেন। এলাকাবাসী মনে করে, এ বিষয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এই পাহাড়ি জনপদে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠলে পিছিয়ে পড়া নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

কীভাবে যাবেন
শেরপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে এ টিলার অবস্থান। এখানে আসতে হলে নিজস্ব যানবাহন বা সিএনজি যোগে জেলা শহরের শাপলা চত্বর থেকে শ্রীবরদী পৌর শহর হয়ে বালিজুড়ি রেঞ্জ অফিসে আসতে হবে। রেঞ্জ অফিসের পশ্চিম পার্শ্বেই এ টিলার অবস্থান।

কোথায় থাকবেন
শ্রীবরদী উপজেলা সদরের ডাক বাংলোতেও থাকতে পারেন। এর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি লাগবে। এছাড়া শেরপুর জেলা সদর ও আশপাশে বেশ কয়েকটি খাওয়ার হোটেল ও থাকার জন্য মোটামুটি ভালো মানের গেস্ট হাউজ বা আবাসিক হোটেল রয়েছে। যেখানে নিশ্চিন্তে রাত্রিযাপন করা যাবে। তবে পাহাড়ি পরিবেশে থাকতে চাইলে নেওয়াবাড়ি টিলা থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে বনফুল নামে একটি আবাসিক হোটেল।

সতর্কতা
নেওয়াবাড়ির টিলার আশপাশের পাহাড়ি এলাকার লাগোয়া ভারতীয় সীমান্ত। তাই পাহাড়ের ভেতর দিয়ে বেশি দূর এগোনো ঠিক হবে না। তাছাড়া সন্ধ্যার পর পাহাড়ের ভেতরে অবস্থান করাও ঠিক হবে না। কারণ এ অঞ্চলে বন্যহাতির আনাগোনা রয়েছে।

(জাগরণীয়া ডেস্ক)
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

আদর্শ রাষ্ট্রপ্রধান হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.)


পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুসলমান ও ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবুবকর (রা.)। যিনি মুসলিম মিল্লাতের কাছে সিদ্দিক (সত্যবাদী) হিসেবে প্রসিদ্ধ। কারণ, তিনি সর্বদাই সত্য কথা বলতেন। সৎকাজের প্রতিযোগিতায় তিনি সকলের চাইতে অগ্রগামী ছিলেন।

যে সকল সৌভাগ্যবান সাহাবি সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) তাদের মধ্যে অন্যতম। আবু বকর (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে হুজুর (সা.) নিজে বলেন, আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি তার মধ্যেই এক প্রকার দ্বিধা- দ্বন্দ্ব অবস্থা দেখতে পেয়েছি। কিন্তু যখন আবু বকরের সামনে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছি তখন তিনি কোনোরূপ সংকোচ বোধ না করে সাথে সাথেই ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মোহাম্মদ (সা.) -এর বিপদ-আপদের সাথী। মোট কথা হলো, বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.) -এর পরে মানবজাতির মধ্যে আবুবকর সিদ্দিক (রা.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।

প্রথমে তিনি একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের সাহায্যার্থে এ সবকিছু খরচ করতে করতে এমন অবস্থায় উপনীত হলেন যে, হুজুর (সা.) একবার সাহাবিদের কাছ থেকে এক যুদ্ধের জন্য অনুদান আদায়ের সময় আবুবকর সিদ্দিক (রা.) ঘরে যা ছিল সম্পূর্ণ এনে রাসুলের সামনে পেশ করলেন। হুজুর (সা.) বললেন, আবুবকর! ঘরে কি রেখে এসেছেন? উত্তরে বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলকে। অর্থাৎ ঘরে যা ছিল তাই নিয়ে এসেছেন।

ইসলামের জন্য আবুবকর (রা.) -এর ত্যাগ তিতিক্ষা ছিল সীমাহীন। হুজুর (সা.) বলেন, আমার উপর যার যতো এহসান ছিল, প্রত্যেকের প্রতিদানই আমি দিয়ে দিয়েছি কিন্তু আবুবকর (রা.) -এর প্রতিদান বাকি রয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন নিজ হাতে আমার আবুবকরের প্রতিদান দান করবেন।
হুজুর (সা.) এর ওফাতের পর যখন মুসলমানদের খলিফা (রাষ্ট্রপ্রধান) নিযুক্ত করা হল, তখন ভোরে কিছু কাপড় নিয়ে বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে যেতে উদ্যত হলেন, উমর (রা.) তা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন কোথায় যাচ্ছেন?

উত্তরে তিনি বললেন, আমাকে তো রাষ্ট্রপ্রধান করে মুসলমানদের কাজে নিযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমার পরিবার পরিজন রয়েছে, তাদের খানাপিনার ব্যবস্থাও তো করতে হবে, তাই বাজারে যাচ্ছি কাপড় বিক্রি করার জন্য। হজরত আবু উবায়দা (রা.) ছিলেন রাষ্ট্রের কোষাগারের দায়িত্বে নিয়োজিত।
উমর (রা.) বললেন, আসুন আমরা তার কাছে যাই। তিনি আপনার জন্য কিছু ভাতা ঠিক করে দেবেন।
আবু উবায়দা (রা.) বললেন, একজন সাধারণ মুহাজির সাহাবির ভাতা যে পরিমাণ আপনাকে ও তাই দেওয়া হবে।

বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, যে পরিমাণ ভাতা আবুবকর (রা.) -এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা উনার সংসার পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ না করে তিনি সাধারণ ভাবেই জীবন যাপন করেছিলেন।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে তিনি সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
একবার আবুবকর সিদ্দিক (রা.) -এর স্ত্রী হজরত উম্মে রুমান (রা.) তার স্বামীকে বললেন, বাচ্চাদের মিষ্টান্ন খেতে মন চেয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান স্বামী উত্তর দিলেন, আমার নিকট তো এতো পয়সা নেই যা দিয়ে তোমাদের জন্য মিষ্টান্ন ক্রয় করে খাওয়াতে পারি।

স্ত্রী বললেন, আমরা যদি দৈনিক খরচ থেকে সামান্য সামান্য বাঁচিয়ে রাখি, তাহলে তা দিয়ে মিষ্টান্ন ক্রয় করে আনতে পারব। কিছুদিন পর কিছু পয়সা বাঁচিয়ে স্বামীর হাতে দিলেন মিষ্টান্ন আনার জন্য।
কিন্তু আবুবকর (রা.) বললেন, তুমি যেহেতু এই পরিমাণ পয়সা বাঁচিয়ে রাখতে পারলে, তাহলে বোঝা গেল এই পরিমাণ পয়সা ছাড়াও আমার সংসার চলতে পারে। তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দিকে গেলেন এবং তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে বললেন, আগামী মাস থেকে আমার ভাতা এই পরিমাণ কমিয়ে দিবে। কারণ, এই পয়সা ছাড়াও আমার সংসার চলতে পারে।

ইন্তেকালের পূর্বে আবুবকর সিদ্দিক (রা.) তার কন্যা হজরত আয়েশা (রা.) কে বললেন, আমি রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার সুবাধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমাকে দুধাল উটনিটি, তরকারির পেয়ালা এবং এই চাদরটি দেওয়া হয়ে ছিল। আমার ইন্তেকালের পর হজরত উমর (রা.) এর নিকট উক্ত জিনিসগুলো পৌঁছিয়ে দিবে।
উল্লেখিত ঘটনাটি দ্বারা বুঝা যায়, হজরত আবুবকর (রা.) রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহারে কি পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করতেন।

তিনি ছিলেন একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক। আজও বিশ্বজুড়ে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তাদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান আবুবকর সিদ্দিক (রা.) এক রুল মডেল।

(আমাদের সময়.কম)
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া, তেঁতুলিয়ায়, পঞ্চগড়

দেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জনপদের নাম পঞ্চগড়। শীতপ্রবণ এ জেলার তেঁতুলিয়া থেকে এ সময়টাতে বেশ স্পষ্ট দেখা যায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সীমান্ত নদী মহানন্দায় সূর্যাস্ত দর্শন, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, সমতল ভূমিতে গড়ে ওঠা সবুজের নৈসর্গ চা বাগানসহ নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর পঞ্চগড়। অন্যদিকে, মোঘল আমলের স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বার আউলিয়ার মাজার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান বদেশ্বরী মন্দির (সীতার ৫১ পীঠের এক পীঠ), পাথরসমৃদ্ধ রকস মিউজিয়াম, প্রাচীন ডাকবাংলো, পিকনিক কর্নার, কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেটের আনন্দ ধারা, শিশুপার্ক, ইত্যাদি দেখলে পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে যাবে। অঢেল অর্থ ব্যয় করে চীনের তিব্বত, নেপাল বা ভারতে না গিয়েও সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে শীতের মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষারশুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা।

পর্বতের বরফঢাকা শরীরে সূর্যের আলো পড়লে তা চকচকে হয়ে ওঠে। তাই দেশ বিদেশ থেকে মানুষ তেঁতুলিয়ায় ভিড় করতে শুরু করেছে। কেউ একা, কেউ বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে আবার কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে আসছেন এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সাক্ষী হতে। তেঁতুলিয়ার পুরানো ডাকবাংলোর পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত মহানন্দার পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের বর্ণিল আলোকচ্ছ্বটায় উদ্ভাসিত অভূতপূর্ব দৃশ্যে অন্যরকম ভালো লাগার দ্যুতিতে মন ভরে যায়। দিনের আলো শেষে সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষা ভারতের সার্চ লাইটের আলো, শিলিগুড়ি শহরের নিয়নবাতি, মহানন্দা নদীর পানির কুল কুল শব্দ পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হওয়ায় প্রতিদিনই তেঁতুলিয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটক ও প্র্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা না থাকায় রাত্রি যাপনের জন্য বাংলাবান্ধা-তেঁতুলিয়া থেকে ফিরে যেতে হয় ৬০ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় শহরে। ফলে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অপার সম্ভাবনাময় এ এলাকাটিকে পূর্ণ পর্যটন এলাকায় রূপান্তরিত করা সম্ভব।

বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গ ৭৫ কিলোমিটার, ভুটান ৬৪ কিলোমিটার, চীন ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিং ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ি ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। পঞ্চগড় জেলা মোটর মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা এবং বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকা পর্যন্ত হানিফ, শ্যামলী বা নাবিল পরিবহনের এসি/ননএসি বাস চলাচল করছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে সৈয়দপুর পর্যন্ত এসে সেখান থেকে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে করে যাওয়া যায় বাংলাবান্ধা পর্যন্ত।

সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

৭ মার্চের ভাষণ একটি দলিল, একটি ইতিহাস - সৈয়দ আবুল মকসুদ

বাঙালি জাতির জীবনে একাত্তরের ৭ মার্চ অন্য যেকোনো একটি দিনের মতো ছিল না। যদিও দিনটি ছিল অন্যান্য বছরের ফাল্গুনের দিনগুলোর মতোই পাতা ঝরার সময়। শেষ ফাল্গুনের দুপুরটি ছিল না শীত না গরম। আকাশ ছিল পরিষ্কার, কিন্তু চড়া রোদ সেদিন ছিল না। সেদিন রেসকোর্স বা বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে সমাবেশ হয়, সেই সমাবেশও অতীতের কোনো সমাবেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়। শেখ মুজিবুর রহমান অতীতে বহু জনসভায় বক্তৃতা করেছেন, কিন্তু সেদিনের সমাবেশে তিনি যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন, সেটি ছিল তাঁর জীবনের অনন্য এক ভাষণ। তাঁর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে দুটি প্রধান দলিলের একটি। দ্বিতীয়টি ১০ এপ্রিলের বৈদ্যনাথতলার ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’।

কোনো কোনো জাতির ইতিহাসে কোনো একটি প্রজন্ম খুবই ভাগ্যবান। শত দুঃখ-কষ্ট সয়েও তারা ভাগ্যবান এই জন্য যে তারা নিজের চোখে ইতিহাসের নির্মাণ দেখে। তাদের মধ্যে যাদের ইতিহাস সৃষ্টিতে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়, তাদের সৌভাগ্য সীমাহীন। আমরা বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন এবং স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সেই প্রজন্ম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে আন্দোলনের ইতিহাস বই পড়ে জানবে, তা আমাদের চোখে দেখা।

ঘরোয়া আলোচনায় বা সেমিনারে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনতে পছন্দ করতাম। কিন্তু কোনো জনসভায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নেতাদের বক্তৃতা শুনতে আমার ভালো লাগত না। অখণ্ড পাকিস্তানের শেষ চার মাস আমি বেশ কয়েকটি জনসভায় শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। ঘূর্ণিঝড়বিধ্বস্ত উপকূল এলাকা থেকে ফিরে এসে মওলানা ভাসানী পল্টন ময়দানে যে জনসভা করেন ২৩ নভেম্বর ১৯৭০; তা শুনতে দৈনিক পাকিস্তান গ্রুপের অনেকের সঙ্গে আমিও স্টেডিয়ামের দোতলার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই। ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ কথাটি সেদিন সেখানে প্রথম উচ্চারিত হয়। শুনে অনেকের মতোই কবি শামসুর রাহমান রোমাঞ্চিত হন। একাত্তরের ২১ ফেব্রুয়ারি পল্টনে ছাত্রলীগের জনসভায় বন্ধুদের সঙ্গে আমি মঞ্চের কাছেই ছিলাম। সেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধিকারের কথা সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়। ছাত্রলীগের ৩ মার্চের জনসভায়ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনি। সর্বশেষ যে স্মরণীয় জনসভাটিতে আমি উপস্থিত ছিলাম, সেটি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি—বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি বন্দিশালা থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন।

৭ মার্চ রক্তের অক্ষরে লেখা একটি দিন। তবে জাতির জীবনে ৭ মার্চও হঠাৎ আসেনি। তার আছে এক দীর্ঘ পটভূমি।

সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং কেন্দ্রের সামরিক-বেসামরিক আমলাচক্র চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাদের দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষও উদাসীন ছিল না। বঙ্গবন্ধুও বুঝতে পারছিলেন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার কুচক্রী মনোভাব। ইয়াহিয়া-ভুট্টো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে সমস্ত জানুয়ারি মাসটিকে কাজে লাগান। ১২ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে। তিনি ছয় দফার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চান। অতি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি সন্তুষ্ট হন না। এরপর জানুয়ারির শেষ হপ্তায় ভুট্টো আসেন তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে শেখ মুজিবের সঙ্গে ছয় দফা বিষয়ে আলোচনার জন্য। তাঁর কাছে ছয় দফা বিচ্ছিন্নতাবাদী এজেন্ডা। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া-ভুট্টো দীর্ঘ আলোচনা করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া এক ঘোষণায় ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ভুট্টো জানিয়ে দেন, তিনি ঢাকায় আসবেন না, কারণ ঢাকা এলে তাঁকে বাঙালিরা মেরে ফেলবে। ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম পাকিস্তানের আরও নেতা ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁদের মধ্যে সিন্ধুর জাতীয়তাবাদী নেতা জি এম সৈয়দও ছিলেন। তিনি করাচি গিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি বলেন, তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, ছয় দফায় পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ক্ষতিকর কিছু নেই।

মানুষের জীবনের কিছু কিছু স্মৃতি কোনো দিনই ম্লান হয় না। তা চির-অম্লান। পাকিস্তান আমলের শেষ একুশে ফেব্রুয়ারির কথা আমার মনে পড়ে। সে ছিল এক অন্য রকম শহীদ দিবস। হাজার হাজার মানুষ রাত ১০টার পর থেকে শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে যেতে থাকেন। সেই লাখো জনতার মধ্যে বঙ্গবন্ধুও ছিলেন। রাত ১২টা ১ মিনিটে তিনি শহীদদের কবরে ফাতেহা পাঠ করেন এবং কবরে ফুল দেন। সেখান থেকে তিনি খালি পায়ে হেঁটে আসেন শহীদ মিনাের। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সে রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হেঁটে শহীদ মিনারে আসার। সে রাতে তিনি শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কারও বাজারও হবে না, কারও কলোনিও হবে না। বায়ান্নতে তারা আমাদের ছেলেদের হত্যা করেছে। তঁারা শহীদ। এবারের সংগ্রামে আমরা হব গাজী।’

একাত্তরের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের রেসকোর্সে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও আমি উপস্থিত ছিলাম। নৌকার আকারে বিরাট মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। শপথ গ্রহণ পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে পরিবেশিত হয়েছিল ‘আমার সোনার বাংলা’ এবং বেশ কিছু গণসংগীত।

১ মার্চ পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সংসদীয় দলের সভা চলছিল। তখনই রেডিওতে ঘোষণা করা হয়, ৩ মার্চ যে অধিবেশন বসার কথা, তা প্রেসিডেন্ট মুলতবি করেছেন। আমি তখন ওই হোটেলের কয়েক গজ দূরে সিকান্দার আবু জাফরের সমকাল অফিসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ মতিঝিল, জিন্নাহ অ্যাভিনিউ (ওই দিনই এর নামকরণ হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) এবং দৈনিক বাংলার দিক থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান শুনতে পাই: ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ প্রভৃতি। বেরিয়ে দেখি রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ। অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা।

তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে অধিবেশন মুলতবির প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এ এক সুদীর্ঘ ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতি’। তিনি পরদিন ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে হরতালের ঘোষণা দেন। তিনি জানিয়ে দেন, ৭ মার্চ রেসকোর্সে এক সমাবেশে ‘বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা’ করা হবে। ১ মার্চ থেকেই ৭ তারিখের জন্য মানুষ রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে থাকে। তখন থেকে রাজনীতি শুধু আর আওয়ামী লীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না। সব দলমতের মানুষই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

তখন রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে মওলানা ভাসানী রোড এখনকার মতো প্রশস্ত ছিল না। সোহরাওয়ার্দীর দিকেও শতবর্ষী সেগুন ও মেঘশিরীষ ছিল কয়েকটি। উদ্যানটি ফাঁকা। সমাবেশের নির্ধারিত সময় ছিল বেলা দুইটা। বেলা সাড়ে ১১টার সময় কমলাপুর জসীমউদ্দীন রোড থেকে আমি গিয়ে দেখি রেসকোর্স এক জনসমুদ্র। কোনোরকমে আমি ঠাঁই পাই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের উল্টো দিকে এক গাছের তলায়, যে গাছের ডালেও বসেছিল কয়েকজন। জনতার ভিড়ে ৩২ নম্বর থেকে সভামঞ্চে আসতে বঙ্গবন্ধুর ঘণ্টা খানেক দেরি হয়। প্রথাগত জনসভা নয়, একমাত্র বক্তা বঙ্গবন্ধু। জনতার শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটে। উচ্চারিত হয়: ‘ভায়েরা আমার...।’

সেদিন তিনি কী বলেছিলেন, দেশের মানুষের আজ তা মুখস্থ। ভাষণে একটি শব্দও নেই অপ্রাসঙ্গিক। একটি বাক্যও নেই অন্যায্য। ভাষণের শুরুতেই তিনি কয়েকবার ‘দুঃখ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। বাস্তবিক পক্ষেই সেদিন তিনি ‘দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে’ জনতার ‘সামনে হাজির’ হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষের ওপর সামরিক জান্তার নির্মম অত্যাচার। বঙ্গবন্ধু তাঁর আন্দোলনের পটভূমি জনতার সামনে তুলে ধরেন। তবে তা বিশুদ্ধ বইয়ের ভাষায় নয়, জনগণের মুখের ভাষায়। পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে কখন তাঁর কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জনগণকে জানান। পাকিস্তানের ‘মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে’ তাঁর দায়িত্ব বিরাট, তাই তিনি সবার সঙ্গে ‘আলোচনা’ ও ‘আলাপ’ করে ‘শাসনতন্ত্র তৈয়ার’ করার কথা বলেন।
ভাষণে তিনি যে চারটি শর্ত দেন, তার চেয়ে ন্যায়সংগত দাবি ওই পরিস্থিতিতে হতে পারত না। এক. সামরিক আইন প্রত্যাহার, দুই. সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, তিন. সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা, এবং চার. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি ছিল: ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ আর একটি প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছিল: ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’

বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ধারার জননেতা, গেরিলা যুদ্ধের বিপ্লবী নেতা নন। তাঁর ক্ষমতার উৎস জনগণ, বন্দুকের নল নয়। সেদিনের ভাষণের বিষয়বস্তুর বিকল্প আর কী হতে পারত? তাঁর পক্ষে কি বলা সমীচীন হতো: ‘আমি ঘোষণা দিচ্ছি, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ অমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা তিনি বলেননি কারণ, পাকিস্তানের ভৌগোলিক ও অন্যান্য বাস্তবতায় তা তিনি দিতে পারেন না। তা দিলে বাংলাদেশ হতো নাইজেরিয়ার বায়াফ্রা। আবেগের বশে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে দেশের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষের সমর্থন পেলেও পৃথিবীর সমর্থন পেতেন না—এমনকি ভারতেরও নয়।

বঙ্গবন্ধু সঠিকভাবেই বলেছিলেন: ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতাই আমাদের লক্ষ্য। তার জন্য আজ থেকে সংগ্রাম শুরু হলো। স্বাধীনতা কারও হাতে তুলে দেওয়ার জিনিস নয়, তা সংগ্রাম ও ত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল ৭ মার্চের ভাষণে।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি আরেকটু দীর্ঘ ছিল। রেকর্ড করার সময় মাঝে মাঝে কিছু কথা বাদ পড়ে থাকবে। সেকালে রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা এখনকার মতো নিখুঁত ছিল না। কিন্তু তাতে ভাষণটির অঙ্গহানি ঘটেনি। ৭ মার্চের ভাষণ একটি দলিল, একটি ইতিহাস।

লালবাগ দুর্গ

প্রথমে এই কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। আর এই কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর ৩য় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মাত্র এক বছর পরেই দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙগজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয় এবং শায়েস্তা খান ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। এই পরী বিবির সাথে শাহজাদা আজম শাহের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে রাজকাজ পরিচালনা করতেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানকার স্থাপনার অন্তর্গতঃ পরীবিবির সমাধি বেশ উল্লেখযোগ্য। এটি মোগল আমল এর একটি চমৎকার নিদর্শন। প্রশস্ত এলাকা নিযে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত।

কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-
কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা
পরীবিবির সমাধি
উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ

এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বাংশে সুদৃশ্য ফটক, এবং দক্ষিণ দেয়ালের ছাদের উপরে বাগান রয়েছে।বর্তমানে রবিবার পূর্ণ দিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকী ছয়দিন এই কেল্লা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

-বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

মুঘল ঈদগাহ্ (ধানমন্ডি ঈদগাহ্)


ধানমন্ডির পুরোনো ১৫ এবং নতুন ৮/এ সড়কে অর্থাৎ সাতমসজিদ রোড এলাকায় প্রাচীরেবেষ্টিত মাঠটি মুঘল ঈদগাহ্। এটি ধানমন্ডি ঈদগাহ্ নামে বহুল পরিচিত। এই ঈদগাহ্ প্রায় চারশ বছর আগে শাহ্ সুজার আমলে তাঁর দেওয়ান মীর আবুল কাসিম কর্তৃক নির্মিত। এই তথ্যটি ঈদগাহের কেন্দ্রীয় মেহরাবের শিলালিপি থেকে জানা যায়। প্রায় আড়াইশ ফুট দৈর্ঘ্য এবং দেড়শ ফুট প্রস্থে চুন-সুরকির প্রাচীর বেষ্টিত থাকলেও বর্তমানে কেবলমাত্র পশ্চিম দিকের মূল উঁচু দেয়ালটি দন্ডায়মান। এই ঈদগাহটি ১৬৪০ সালে নির্মাণের পর থেকে ঈদের নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিখ্যাত স্থপতি আবু সৈয়দ এম, আহমেদ লিখেছেন যে, মোঘল আমলে নির্মিত এই ঈদগাহের মতো স্থাপত্যকলার নিদর্শন আর একটিও নেই। এই ঈদগাহটি পর্যটকগণের জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান।

-বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

আহসান মঞ্জিল (গোলাপী প্রাসাদ)

আহসান মঞ্জিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কুমারটুলি এলাকায় ঢাকার নওয়াবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি। বর্তমানে জাদুঘর। কথিত আছে, মুঘল আমলে এখানে জামালপুর পরগণার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ্’র রঙমহল ছিল এ স্থানটি। পরে তাঁর পুত্র মতিউল্লাহ্’র নিকট থেকে রঙমহলটি ফরাসিরা ক্রয় করে এখানে একটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে।

১৮৩০ সালে খাজা আলীমুল্লাহ্ ফরাসিদের নিকট থেকে কুঠিবাড়িটি কিনে নেন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে এটি নিজের বাসভবনে পরিণত করেন। এ বাসভবনকে কেন্দ্র করে খাজা আব্দুল গণি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানী নামক একটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরী করান যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। আব্দুল গণি তাঁর পুত্র খাজা আহসানউল্লাহ’র নামানুসারে ভবনের নামকরণ করেন আহ্সান মঞ্জিল। ওই যুগে নবনির্মিত প্রাসাদ ভবনটি রঙমহল এবং পূর্বেকার ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল।

আহসান মঞ্জিল দেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন। ১ মিটার উঁচু বেদির উপর স্থাপিত দ্বিতল প্রাসাদ ভবনটির আয়তন দৈর্ঘে ১২৫.৪ বর্গমিটার ও প্রস্থে ২৮.৫ বর্গমিটার। নিচতলায় মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫ মিটার ও দোতলায় ৫.৮ মিটার। প্রাসাদটির উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়ি বারান্দার উপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ খোলা সিঁড়ি সন্মুখস্থ বাগান দিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। সিঁড়ির সামনে বাগানে একটি ফোয়ারা ছিল যা বর্তমানে নেই। প্রাসাদের উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলান সহযোগে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা ও কক্ষগুলির মেঝে মার্বেল পাথরে শোভিত।

আহসান মঞ্জিলের ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকার ভবনটিকে সংস্কার করে জাদুঘরে পরিণত করেছে। গণপুর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের দায়িত্বে এর সংস্কার কাজ ১৯৯২ সালে সম্পন্ন করে ওই বছরেরই ২০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাসাদটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর-এর নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং এখানে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়।

-বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

Thursday, November 21, 2019

বাংলাদেশের তরুণদের গর্বের মহান "বিজয় দিবস"

মহান বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। বাঙালির বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জানান দেয়ার দিন। প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ২২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ’৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন, ৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬ দফা ভিত্তিক ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন প্রভূত ঘটনা প্রবাহের মধ্য স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন দেশটির প্রধান মাননীয় রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সরকারি দলীয় নেতা-কর্মী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন। দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হয় আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না।

আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ-
“পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ করবে।
এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে”।

উৎসঃ ইন্টারনেট
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান

স্বাধীনতার বীজ বুনন - বাংলার ভাষা আন্দোলন

 
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষাহিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে, অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দু’টি অংশ: পূর্ব বাংলা (১৯৫৫ সালে পুনর্নামাঙ্কিত পূর্ব পাকিস্তান) ও পশ্চিম পাকিস্তান। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেকগুলো মৌলিক পার্থক্য বিরাজমান ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যতঃ পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, তেজোদীপ্ত তরুণ সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক , পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন।

ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৬ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়।

-মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

সোনারগাঁও - বাংলার প্রাচীন রাজধানী

 
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে হিন্দু আমলের রাজধানী এখানেই অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসকদের পুর্ববঙ্গের প্রাদেশিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম থেকে সোনারগাঁও নামের উদ্ভব বলে কারো কারো ধারণা রয়েছে। অন্য ধারণামতে বারো ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ’র স্ত্রী সোনাবিবি’র নামানুসারে সোনারগাঁও নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদের মধ্যে শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সোনারগাঁও একটি গৌরবময় জনপদ। আনুমানিক ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে এ অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়। মধ্যযুগে এটি মুসলিম সুলতানদের রাজধানী ছিল।

১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ঢাকা সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হবার পূর্ব পর্য়ন্ত সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। ঈশা খাঁ ও তাঁর বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। সোনারগাঁও-এর আরেকটি নাম ছিল পানাম।পানাম নগরের নির্মিত ভবনগুলো ছোট লাল ইট দ্বারা তৈরী। ইমারতগুলো কোথাও একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন, আবার কোথাও সন্নিহিত।অধিকাংশ ভবনই আয়তাকার এবং উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত।দীর্ঘ একটি সড়কের উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ভবন স্থাপত্যের মাধ্যমে পানামনগর গড়ে উঠেছিল। উভয় পাশে মোট ৫২টি পুরোনো বাড়ী এই ক্ষুদ্র নগরীর মূল আকর্ষণ।

পানাম শহরের ঠাকুরবাড়ি ভবন ও ঈশা খাঁ’র তোরণকে একত্রে নিয়ে মোট প্রায় ষোল হেক্টর স্থান জুড়ে লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অবস্থান। এখানে ১টি জাদুঘর, ১টি লোকজ মঞ্চ, সেমিনার কক্ষ ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে। এখানকার জাদুঘরে প্রায় সাড়ে চারহাজার নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্য়ন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্য়ন্ত জুমার নামাজের জন্য জাদুঘর বন্ধ থাকে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মোগড়াপাড়া ক্রসিং থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তরে সোনারগাঁও অবস্থিত। সবুজ বন-বনানী আর অনুপম স্থাপত্যশৈলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য়ের নান্দনিক ও নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও।

-বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

উয়ারী-বটেশ্বর



উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উয়ারী এবং বটেশ্বর গ্রাম দু’টি ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রার প্রাপ্তিস্থান হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত। গ্লাইসটোসিন যুগে গঠিত মধুপুর গড়ের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত এ গ্রাম দু’টিতেই নিবিড় অনুসন্ধান ও সীমিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয়েছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উয়ারী প্রত্নস্থলে আবিষ্কৃত হয়েছে ৬০০ মি. x ৬০০ মি. আয়তনের চারটি মাটির দুর্গ-প্রাচীর। দুর্গ প্রাচীরের ৫-৭ ফুট উঁচু ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। এছাড়াও দুর্গের চারিদিকে রয়েছে পরিখা (যদিও কালের ব্যবধানে তাতে মাটি ভরাট হয়েছে)। ভরাট হলেও পূর্ব প্রান্তের পরিখার চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। দুর্গের পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৫.৮ কি.মি. দীর্ঘ, ২০মি. প্রশস্ত ও ১০ মি. উঁচু অসম রাজার গড় নামে একটি মাটির বাঁধ রয়েছে। সম্ভবত এটি দ্বিতীয় দুর্গ প্রাচীর হিসেবে উয়ারী দুর্গনগরের প্রতিরক্ষার কাজ করত। ভারতের নাগার্জুনকুন্ড হলো এরকম দ্বিস্তর বিশিষ্ট দুর্গ প্রাচীরের আরেকটি উদাহরণ।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত উয়ারী নগরের বাইরে আরো ৫০টি প্রত্নস্থান এ যাবত আবিষ্কৃত হয়েছে। বন্যামুক্ত উঁচু স্থানে বসতি স্থাপনকারী মানুষের মতো উন্নত পরিকল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় মহাস্থান ও উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ অঞ্চলের বসতিবিন্যাসেও দেখা যায়। উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি দুর্গনগর, নগর বা একটি নগর কেন্দ্র। আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তু বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় যে, উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একাধারে একটি নগর ও সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র। বহু প্রত্নতত্ত্বপ্রেমী পর্যটক উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে বেড়ান।

-বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন.
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

ময়নামতি

ময়নামতি বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এযাবৎ আবিষ্কৃত লালমাই অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন হল ময়নামতি প্রত্নস্থল। বর্তমানে ময়নামতি অঞ্চলে যে ধ্বংশস্তুপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী ও বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ । প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে ইহা জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ ।
কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।
ধারণা করা হয় যে খৃষ্টিয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খৃষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।
আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্খানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির।
বিহারের বাইরে প্রবেশ দ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।
এ স্থানটি দর্শনে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। ঢাকা থেকে ১১৪ কি.মি. দূরে ময়নামতির অবস্থান এবং চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ২ ঘন্টায় ময়নামতি পৌঁছানো সম্ভব।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

মহাস্থানগড়


মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর যুদ্ধ হয়। (১২০৫-১২২০) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
মহাস্থান গড় বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান হতে বহু লোক সমাগম ঘটে।

-বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন
সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মসজিদ

1) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ-
বায়তুল মুকাররম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। মসজিদটি ঢাকায় অবস্থিত। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

আব্দুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানি প্রথম ঢাকাতে বিপুল ধারণক্ষমতাসহ একটি গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল নিকটবর্তী। বিশিষ্ট স্থপতি টি. আব্দুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়। পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, লাইব্রেরি ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের প্রধান কক্ষটি তিন দিকে বারান্দা দিয়ে ঘেরা। মিহরাবটি অর্ধ-বৃত্তাকারের পরিবর্তে আয়তাকার। আধুনিক স্থাপত্যে কম অলংকরণই একটি বৈশিষ্ট্য-যা এই মসজিদে লক্ষনীয়। এর অবয়ব অনেকটা পবিত্র কাবা শরিফের মতো হওয়ায় মুসলমানদের হৃদয়ে এই মসজিদটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।

2) বিনত বিবি মসজিদ-
বিনত বিবির মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকা এলাকায় অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। নারিন্দা পুলের উত্তর দিকে অবস্থিত এই মসজিদটির গায়ে উৎকীর্ণ শিলালিপি অনুসারে ৮৬১ হিজরি সালে, অর্থাৎ ১৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে মারহামাতের কন্যা মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করান।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ সকল মসজিদের মধ্যে বেশির ভাগই পুরান ঢাকায় অবস্থিত। পুরান ঢাকার ৬নং নারিন্দা রোডে এখনো গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার সর্বপ্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত নারিন্দা বিনত বিবির মসজিদটি।
এটি ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর একটি; যা প্রায় ৬০০ বছর আগের। ১৪৫৬ খ্রিস্টব্দে ইসলাম খাঁর আগমনের প্রায় দেড়শ বছর আগে বাংলার সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদের আমলে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি নির্মিত হয়।
সে সময় পারস্য উপসাগরের আশেপাশের লোকজন প্রায়ই জলপথে এ অঞ্চলে বাণিজ্যে আসতেন। পুরান ঢাকার এ এলাকা (নারিন্দা-ধোলাইখাল) দিয়ে তখন বয়ে যেত বুড়িগঙ্গার একটি শাখা যা বুড়িগঙ্গা হয়ে শীতলক্ষ্যায় গিয়ে মিশত। আরাকান আলী নামক এক সওদাগর সে সময় এ এলাকায় বাণিজ্যের জন্য আসেন এবং এখানে বসবাস শুরু করেন। তিনিই নামাজ পড়ার সুবিধার্থে এখানে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
এখানে বসবাসকালীন আরাকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মিক মৃত্যু হয়। এই মসজিদের পাশেই সমাধিস্থ করা হয় এবং পরবর্তীতে আরাকান আলীর মৃত্যু ঘটলে তাকেও এখানেই কবর দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিনত বিবির নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। মসজিদের দেয়ালে একটি কালো পাথরে এই ইতিহাস ফার্সি ভাষায় খোদাই করা আছে।
৮৬১ হিজরিতে নারিন্দা রোডস্থ এ মসজিদটির প্রথম সংস্করণ করা হয় এবং ৮৬৬ হিজরিতে বিনত বিবি ও আরাকান আলীর সমাধিস্থলে একটি মাজার স্থাপন করা হয়। বাংলা ১৩৩৭ সালে এ মসজিদটির দ্বিতীয় সংস্করণ করা হয় এবং দ্বিতীয় গম্বুজটি স্থাপন করা হয়।
প্রায় ২০০ বছর ধরে এলাকাবাসী একটি কমিটির মাধ্যমে এ মসজিদটির দেখাশোনা করে আসছেন। এলাকাবাসী ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে বর্তমানে পুরোনো ভবন ঠিক রেখে নতুন তিন তলা মসজিদ ভবণ নির্মিত হয়েছে।

3) সাত গম্বুজ মসজিদ-
সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ। এই মসজিদটি চারটি মিনারসহ সাতটি গম্বুজের কারনে মসজিদের নাম হয়েছে 'সাতগম্বুজ মসজিদ'। এটি মোঘল আমলের অন্যতম নিদর্শন। ১৬৮০ সালে মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মান করান। মসজিদটি লালবাগ দূর্গ মসজিদ এবং খাজা আম্বর মসজিদ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে কাটাসুর থেকে শিয়া মসজিদের দিকে একটা রাস্তা চলে গেছে বাঁশবাড়ী হয়ে। এই রাস্তাতে যাওয়ার পথে পড়ে সাত গম্বুজ মসজিদ।
এর ছাদে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণের প্রতি কোনায় একটি করে অনু গম্বুজ থাকায় একে সাত গম্বুজ মসজিদ বলা হয়। এর আয়তাকার নামাজকোঠার বাইরের দিকের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ১৭.৬৮ এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার। এর পূর্বদিকের গায়ে ভাঁজবিশিষ্ট তিনটি খিলান এটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। দূর থেকে শুভ্র মসজিদটি অত্যন্ত সুন্দর দেখায়। মসজিদের ভিতরে ৪টি কাতারে প্রায় ৯০ জনের নামাজ পড়ার মত স্থান রয়েছে।
মসজিদের পূর্বপাশে এরই অবিচ্ছেদ্য অংশে হয়ে রয়েছে একটি সমাধি। কথিত আছে, এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি। সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেও খ্যাত। এ কবর কোঠাটি ভেতর থেকে অষ্টকোনাকৃতি এবং বাইরের দিকে চতুষ্কোনাকৃতির। বেশ কিছুদিন আগে সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। বর্তমানে এটি সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের সামনে একটি বড় উদ্যানও রয়েছে। একসময় মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যেত বুড়িগঙ্গা। মসজিদের ঘাটেই ভেড়ানো হতো লঞ্চ ও নৌকা। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা কল্পনা করাও কষ্টকর। বড় দালানকোঠায় ভরে উঠেছে মসজিদের চারপাশ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।

4) তারা মসজিদ-
তারা মসজিদ পুরানোঢাকার আরমানিটোলায় আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত। সাদা মার্বেলের গম্বুজের ওপর নীলরঙা তারায় খচিত এ মসজিদ নির্মিতহয় আঠারো শতকের প্রথম দিকে। মসজিদের গায়ে এর নির্মাণ-তারিখ খোদাই করা ছিল না। জানা যায়, আঠারো শতকে ঢাকার 'মহল্লা আলে আবুসাঈয়ীদ'-এ (পরে যার নাম আরমানিটোলা হয়) আসেন জমিদার মির্জা গোলাম পীর (মির্জা আহমদ জান)। ঢাকার ধণাঢ্য ব্যক্তি মীর আবু সাঈয়ীদেরনাতি ছিলেন তিনি। মির্জা গোলাম পীর এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মির্জা সাহেবের মসজিদ হিসেবে এটি তখন বেশ পরিচিতি পায়। ১৮৬০ সালে মারাযান মির্জা গোলাম পীর। পরে, ১৯২৬ সালে, ঢাকার তৎকালীন স্থানীয় ব্যবসায়ী, আলী জান বেপারী মসজিদটির সংস্কার করেন। সে সময় জাপানেররঙিন চিনি-টিকরি পদার্থ ব্যবহৃত হয় মসজিদটির মোজাইক কারুকাজে।
মোঘলস্থাপত্য শৈলীর প্রভাব রয়েছে এ মসজিদে। ঢাকার কসাইটুলীর মসজিদেও এ ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।উল্লেখ্য, দিল্লি, আগ্রা ও লাহোরের সতের শতকে নির্মিত স্থাপত্যকর্মের ছাপ পড়ে মোঘল স্থাপত্য শৈলীতে।
মির্জা গোলামের সময় মসজিদটি ছিল তিন গম্বুজঅলা, দৈর্ঘ্যে ৩৩ ফুট (১০.০৬ মিটার) আর প্রস্থে ১২ ফুট (৪.০৪ মিটার)। আলী জানের সংস্কারেরসময়, ১৯২৬ সালে, মসজিদের পূর্ব দিকে একটি বারান্দা বাড়ানো হয়। ১৯৮৭ সালে তিন গম্বুজ থেকে পাঁচ গম্বুজ করা হয়। পুরনোএকটি মেহরাব ভেঙে দুটো গম্বুজ আর তিনটি নতুন মেহরাব বানানো হয়।
মসজিদের বতর্মান দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট (২১.৩৪ মিটার), প্রস্থ ২৬ ফুট (৭.৯৮ মিটার)।

5) খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ-
১৭০৪-৫ সালে ঢাকার প্রধান কাজী, কাজী খান মোহাম্মদ এবাদউল্লাহ নির্দেশে খান মোহাম্মাদ মৃধা দ্বোতালা এই মসজিদটি নির্মান করেছিলেন! প্রায় ১৭ ফি: উচুঁ এইটা প্লাটফর্মের উপর বানানো হয়েছিল তিন গম্বুজ এই মসজিদটি! নামাজ ঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে মাদ্রাসা! মসজিদ আর মাদ্রাসা ছাড়া বাকি অংশ একদমই উন্মুক্ত, ধারণা করা হয় এখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো, আর নীচের ঘর গুলো ছিল থাকবার জায়গা! খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদটি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে ঢাকার লালবাগে! 

6) বিবি মরিয়ম মসজিদ, নারায়ণগঞ্জ-
নারায়নগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ মহল্লায় অবস্থিত। এটি হাজীগঞ্জ নামেও পরিচিত। এটি বাংলার মুঘল সম্রাট সুবেদার শায়েস্তা খাঁন কতৃক নির্মিত। মসজিদের নিকট সমাহিত তার কন্যা বিবি মরিয়মের নামেই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছ। প্রাচীর বেষ্টিত একটি চতুস্ক-প্রঙ্গনের মধ্যস্থলে উঁচু ভিতে রউপর সৌধটি নির্মিত। সমাধিসৌধের চারপাশের বারান্দায় কয়েকটি সাধারন কবর রয়েছ।
কিভাবে যাওয়া যায়:
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বাস, টেম্পো, অটো অথবা রিক্সাযোগে নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতাল থেকে কিছুটা পূর্ বিবি মরিয়মের মাজার অবস্থিত।

7) কুসুম্বা মসজিদ, রাজশাহী-
কুশুম্বা মসজিদ আত্রাই নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এবং মান্দা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দুরে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত।
বরেন্দ্র জনপদের নওগাঁ জেলার বৃহত্তম উপজেলা মান্দায় অবস্থিত ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ সুলতানী আমলের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এর মিহরাবের উপরে সুলতান আলা-উদ-দীন হোসাইন শাহ এর নাম লিপিবদ্ধ থাকায় ধারনা করা হয় তাঁর শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত হয়। এই মসজিদটি চতুস্কোণ বিশিষ্ট কালো ও ধুসর বর্ণের পাথর এবং পোড়া মাটির ইষ্টক দ্বারা নির্মিত। জ্যামিতিক নক্সার আদলে পোড়ামাটির সুদৃশ্য কারুকাজ খচিত মাটির টালি, মিহরাবে বিভিন্ন ফুল, লতা-পাতা ঝুলন্ত শিকল ও মনোরম শৈল্পিক কারুকাজ যা মুসলিম স্থাপত্য কলার অপূর্ব সমাহার। ইটের তৈরী এই মসজিদের দেওয়াল গুলো বাইরে ও ভিতরে পাথর দ্বারা আবৃত। মসজিদের চার কোনে ৪ টি অষ্টকোনাকার বুরুজ বা টারেট আছে। মসজিদের অভ্যন্তরে দুটি প্রসস্থ স্তম্ভ আছে। এই দুটি স্তম্ভ ও চার পাশের দেয়ালের উপর মসজিদের ৬ টি গম্বুজ আছে। মসজিদটির সম্মূখে ২৫.৮৩ একের আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম কোনে স্তম্ভের উপর একটি উচু আসন রয়েছে। এই আসনে বসেই কাজী/বিচারক বিচার কার্য পরিচালনা করতেন বলে ধারনা করা হয়।
কুশুম্বা মসজিদ নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলাধীন ৮ নং কুশুম্বা ইউনিয়নের কুশুম্বা নামীয় গ্রামে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পার্শে উপজেলা সদর হতে তিন মাইল দক্ষিন-পূর্ব দিকে অবস্থিত ।
কিভাবে যাওয়া যায়:
নওগাঁ - রাজশাহী মহাসড়কে বাসযোগে ৪০ মিনিট সময় লাগবে

8) হযরত শাহ্জালাল (রহ:) মাজার শরীফ, সিলেট-
নগর সিলেটের মধ্যখানে টিলার উপর চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হযরত শাহজালাল (রহ:) এর মাজারজেয়ারতের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিনইধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ সিলেট আসেন। শাহজালাল চরণস্পর্শপাওয়ার কারণেই সিলেটকে অনেকেই পূণ্যভূমি হিসেবে অভিহিত করেন। হযরত শাহজালাল (রহ:)একজন বিখ্যাত দরবেশ ও পীর। তাঁকে ওলিকুল শিরোমণি আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। সিলেট অঞ্চলে তাঁর মাধ্যমেই ইসলামেরপ্রসার ঘটে। সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বুরহান উদ্দিনের ওপর রাজা গৌরগোবিন্দের অত্যাচার এবং এর প্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল (র:) ও তাঁর সফরসঙ্গী৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।শাহজালাল (র.) এর মাজার চত্বরের উত্তরদিকে রয়েছে একটি পুকুর। এই পুকুরেআছে অসংখ্য গজার মাছ। এসব মাছকে পবিত্র জ্ঞান করে দর্শনার্থীরা ছোট ছোট মাছখেতে দেন। গজার মাছের পুকুরে ভেসে বেড়ানো আগতদের আনন্দ দেয়।
হযরতশাহজালাল (র:) এর আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হযরত নিজামুদ্দিনআউলিয়া (র:) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ তিনি তাঁকেএকজোড়া সুরমা রঙের কবুতর বা জালালী কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও এর আশপাশেরঅঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধরএবং জালালী কবুতর নামে খ্যাত। শাহজালালের মাজার এলাকায় প্রতিদিন ঝাঁকেঝাঁকে কবুতর উড়তে দেখা যায়। সিলেটের জনমানসে এই কবুতর নিয়ে অনেকজনশ্রুতি আছে।
শাহজালাল এর মাজারের পাশেই রয়েছে একটি কূপ। এই কূপেসোনা ও রুপার রঙের মাছের অবস্থান প্রত্যক্ষ করা যায়। চারপাশ পাকা এই কূপেদিনরাত পানি প্রবাহিত হয়। মাজারের পশ্চিম দিকে গেলে ঝরনা দেখতে পাওয়াযায়। ঝরনার পানি বোতল ভর্তি করে বিক্রি করা হয়।
মাজারের পূর্ব দিকেএকতলা ঘরের ভেতরে বড় তিনটি ডেকচি রয়েছে। এগুলো ঢাকার মীর মুরাদ দানকরেছেন। ডেকচিগুলোতে রান্না বান্না হয় না। পূণ্যের উদ্দেশ্যে প্রতিদিনদর্শনার্থীরা ডেকচিগুলোতে প্রচুর টাকা পয়সা দান করেন।মাজারের দক্ষিণদিকে গ্রীলঘেরা তারকা খচিত ছোট্ট ঘরটি শাহজালালের চিল্লাখানা। স্থানটিমাত্র দু’ফুট চওড়া। কথিত আছে- হযরত শাহজালাল এই চিল্লাখানায় জীবনের ২৩বছর আরাধনায় কাটিয়েছেন।
দরগার পাশ্ববর্তী মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদেরবাড়িতে হযরত শাহজালালের তলোয়ার ও খড়ম সংরক্ষিত আছে। প্লেট ও বাটিসংরক্ষিত আছে দরগাহ’র মোতওয়াল্লির বাড়িতে।
সিলেট শহরে থাকার আবাসিক হোটেল:
১।হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (বন্দর, শিশুপার্কের কাছে): ০১৭৩১৫৩৩৭৩৩, +৮৮০৮২১২৮৩৩৪০৪
২। হোটেল নির্ভানা ইন (রামের দিঘির পাড়, মির্জা জাঙ্গাল, সিলেট): +৮৮০৮২১২৮৩০৫৭৬, ০১৭৩০০৮৩৭৯০, ০১৯১১৭২০২১৩, ০১৭১১৩৩৬৭৬১
৩। হোটেল স্টার প্যাসিফিক (ইস্ট দরগাহ গেইট): ০১৭১৩৬৭৪০০৯, ০১৯৩৭৭৭৬৬৩৩, ০৮২১-২৮৩৩০৯১
৪। হোটেল অনুরাগ (ধোপা দীঘি নর্থ): ৭১৫৭১৭, ৭১৪৪৮৯, ০১৭১২০৯৩০৩৯
৫। সুরমা ভ্যালি গেস্ট হাউস (জেলা প্রশাসক/পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে): ০১৭১৬০৯৫৮৩৬
৬। হোটেল উর্মি: হযরত শাহজালাল (র: ) মাজার শরীফ পূর্ব দরগাহ্ হেইট, সিলেট, ফোন: ০৮২১-৭১৪৫৬৩, ০১৭৩৩১৫৩৮০৫
খাওয়ার জন্য সিলেটের জিন্দাবাজারে বেশ ভালো কয়েকটি খাওয়ার হোটেল আছে।হোটেল গুলো হচ্ছে পাঁচ ভাই,পানশি,ভোজনবাড়ী,স্পাইসি ও পালকি।এছাড়া উনদাল, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট, ফোন: ০৮২১-২৮৩২১৯৭, ০১৭১৭০২০৫০৫,এক্সোটিকা রেস্টুরেন্ট, হোটেল সুপ্রীম, জাফলং রোড, মিরাবাজার, মোবাইল-০১৭১১১৯৭০১২,আলপাইন রেস্টুরেন্ট,চৌহাট্টা,সিলেট উল্লেখযোগ্য।
কিভাবে যাওয়া যায়:
সিলেট রেল স্টেশন অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মাজারে যাওয়া যায়। রিকশা ভাড়া ২০-২৫ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।সুরমা নদী পার হয়ে মূল শহরে এসে মাজার এ পৌছাতে হয়। পর্যটকরা রিক্সা অথবা সিএনজি যোগে যেতে পারেন। ভাড়া ৩০-৫০/- টাকা

9) হযরত শাহ্ পরাণ (রহ:) মাজার শরীফ, সিলেট-
শাহ পরাণের মাজার সিলেট শহরের একটি পুণ্য তীর্থ বা আধ্যাতিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে বাংলাদেশে আসা ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি। এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগর এলাকায় অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহ থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দুরত্বে শাহ পরাণের মাজার অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহর মতো এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হক সহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার হয়েছে।
সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিমনগর এলাকায় টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নিচে রয়েছে শাহ পরাণের কবর। মাজার টিলায় উঠা নামার জন্য উক্ত মাজার প্রাঙ্গনে উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি আছে। যা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু দেখায়। এই সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত বলে লোক মুখে শোনা যায়। মাজারের পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাদের স্থাপত্বকীর্তিতে নির্মিত তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদে প্রায় ৫ শত মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। মাজার টিলা থেকে প্রায় ১৫/২০ ফুট দহ্মিণ পশ্চিমে মহিলা পর্যটকদের জন্য এক ছালা বিশিষ্ট দালান ঘর রয়েছে। উক্ত দালানের অল্প পরিসর দহ্মিণ পুর্বে আরেকটি ঘর দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘরখানা মুলত বিদেশাগত পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার হয়। এই ঘরের পাশেই একটি পুকুর রয়েছে, যা অজু গোসলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
শাহ পরাণের পুর্ব পুরুষগণ মুলত বোখারীর শহরের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর উধ্বতন ৪র্থ পুরুষ শাহ জামাল উদ্দীন, বোখারী হতে ধর্ম প্রচারে জন্য প্রথমে সমরকন্দ ও পরে তুর্কিস্থানে এসে বসবাস করেন। বংশ সূত্রে শাহ পরাণের পিতা মোহাম্মদও একজন খ্যাতনামা ধার্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মাতা শাহ জালালে আত্মিয় সম্পর্কে বোন ছিলেন। সে হিসেবে তিনি (শাহ পরাণ) হচ্ছেন শাহ জালালের ভাগ্নে। শাহ পরাণের বয়স যখন ১১ বত্সর তখন তিনি তাঁর পিতাকে হারান। পরবর্তিকালে তাঁর আত্মীয় প্রখ্যাত দরবেশ সৈয়দ আহমদ কবিরের কাছে তিনি ধর্ম শিক্ষায় দীক্ষিত হন। সেখান থেকে তিনি আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভে নেশাপুরের বিখ্যাত দরবেশ পাগলা আমীনের স্মরণাপন্ন হয়ে আধ্যাত্মিক শিক্ষায় দীক্ষিত হন। শাহ জালাল যখন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার উদ্যোগ নেন। এ সময় তিনি (শাহ পরাণ) খবর পেয়ে মামার সহচার্য লাভের আশায় হিন্দু স্থানে এসে মামার সঙ্গী হন। সিলেট বিজয়ের পর শাহ জালালের আদেশে তিনি ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শাহ পরাণ সিলেটের নবীগঞ্জ, হবীগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচার করেন। পরবর্তিকালে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হলে শাহ জালালের নির্দেশে তিনি (শাহ পরাণ) সিলেট শহর হতে ছয় মাইল দুরবর্তি দহ্মিণকাছ পরগণাস্থিত খাদেম নগর এলাকায় এসে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানেই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করে বর্তমান মাজার টিলায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।
শাহ জালাল সিলেট আগমন কালে দিল্লী থেকে আসার সময় নিজামুদ্দীন আউলিয়া প্রদত্ত এক জোড়া কবুতর (সিলেটি উচ্চারণ - কৈতর) সঙ্গে আনেন। কবুতর জোড়া সিলেট নিয়ে আসার পর বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শাহ জালালের কবুতর বলে জালালী কৈতর নামে খ্যাত হয়। ধর্মীয় অনূভূতির কারণে এ কবুতর কেহ শিকার করতো না। শাহ পরাণ এ বিষয়টি আমলে না নিয়ে, প্রতি দিন একটি করে কবুতর খেতেন। কবুতরের সংখ্যা কম দেখে শাহ জালাল অনুসন্ধানে মুল ঘটনা জেনে রুষ্ট হন। একথা শাহ পরাণ জানতে পেরে গোপন করে রাখা মৃত কবুতরের পাক হাতে উঠিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন; আল্লাহর হুকুমে কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে যাও। সাথে সাথে পাক গুলো এক ঝাক কবুতর হয়ে শাহ জালালের কাছে পৌছে গেল। শাহ জালাল ভাগিনেকে ডেকে বললেন; তোমার অলৌকিক শক্তি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি । কিন্তু এ ভাবে প্রকাশ্যে কেরামত প্রকাশ করা সঠিক নয়। সব মানুষের বুঝ শক্তি এক রকম হয় না। এ ভাবে কেরামত প্রকাশের কারণে মানুষ ভুল ব্যাখ্যায় পতিত হতে পারে। এরপর শাহ পরাণকে খাদিম নগর এলাকায় ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেন। শাহ পরাণ খাদিম নগরে ইসলাম প্রচারে তাঁর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রাখেন এবং এখানেই তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হন। 

10) হযরত শাহ্ আমানত (রহ:) মাজার শরীফ, চট্টগ্রাম-
বা রো আউলিয়ার পুণ্য ও ধন্যভূমি চট্টগ্রাম। এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয় পীর-আউলিয়া ও ফকির-দরবেশের মাধ্যমে। সুদূর আরব এবং ভারত থেকে কিছু পীর-আউলিয়া ও ফকির-দরবেশ চট্টগ্রাম এসেছিলেন মানব কল্যাণ এবং ইসলাম প্রচারের জন্য। চট্টগ্রামে আগত পীর-আউলিয়া, ফকির-দরবেশদের মধ্যে হযরত বদর শাহ (রহ), হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ), হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ), হযরত মোল্লা মিছকিন শাহ (রহ), হযরত শেখ ফরিদ (রহ), হযরত শাহ গরীব উল্লাহ শাহ (রহ), হযরত বদনা শাহ (রহ) প্রকাশ শফি শাহ (রহ), হযরত আনার উল্লাহ শাহজী (রহ), হযরত শাহ চাঁন্দ আউলিয়া (রহ), হযরত শাহ আমানত (রহ) অন্যতম। তাঁদের আগমনে চট্টগ্রাম ধন্য হয়েছে। চট্টগ্রামের সুফীদের আসন কখনো খালি ছিল না; এখনো নেই। রাজা-বাদশাহরা যেমন পার্থিব ব্যাপারে রাজত্ব করেন তেমনি সুফীদের মতে, সুফীরা ধর্মরাজ্যের রাজা।
হযরত শাহ আমানত (রহ) এর চট্টগ্রামে আগমনের সঠিক সময় জানা না গেলেও ধারণা করা হয় ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দের পরে তিনি চট্টগ্রাম এসেছিলেন। ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন। হযরত শাহ আমানত (রহ) সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাজার শরীফের মুতওয়াল্লী শাহাজাদা শরফুদ্দিন মোহাম্মদ শওকত আলী খান বলেন, হযরত শাহ আমানত (রহ) এর পূর্বপুরুষের নিবাস ছিল ইরাকে। তিনি বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানীর (রহ) বংশধর ছিলেন। তাঁর বাবার নাম হযরত নিয়ামত শাহ (রহ)। ভারতের বিহারের প্রখ্যাত সাধক সুফী হযরত মোনামেয় পাকবাচ তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন। তার পূর্বপুরুষগণ বংশ পরম্পরায় বুজুর্গ ছিলেন। মহান সাধক সুফী হযরত শাহ আমানত (রহ) ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং আল্লাহর সাধনায় নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। সংসারের সমস্ত মায়া-মমতা ত্যাগ করে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বিহার থেকে কাশ্মীর চলে যান। কাশ্মীরে গিয়ে তিনি প্রখ্যাত সাধক পীর হযরত শহীদ (রহ) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১২ বছর তিনি তার পীরের কাছে অবস্থান করে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন এবং সাধনা করে আধ্যাত্মিক জগতের শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন। সেখান থেকে তিনি চট্টগ্রামে এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে পাখা টানার চাকরি নেন। দিনের বেলায় তিনি চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে চাকরি করতেন আর রাতের বেলায় লালদীঘির পূর্বপাড়স্থ নিজস্ব ছোট্ট কুটিরে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকতেন। তিনি সব সময় দুঃস্থ-অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যেতেন। তিনি সাদাসিধে জীবন-যাপন করতেন। তার আচার ব্যবহার, চলাফেরা, কথাবার্তায় অমায়িকভাব থাকার কারণে লোকজন তাকে মিয়া সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। অল্প আহার, অধিক ইবাদত করা ছিল তাঁর করণীয় কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম। ভক্তদের তিনি হালাল উপার্জন, সত্ জীবন-যাপন, সংযমী এবং ইবাদতে মশগুল থাকার পরামর্শ দিতেন।
মানব কল্যাণ করতে গিয়ে তাঁর প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক শক্তি প্রকাশ পায়। তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পাওয়ার পর তিনি আর চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে চাকরি করতে পারেননি। তিনি চাকরি ছেড়ে ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং মানব কল্যাণে নিজেকে পুরোপুরিভাবে নিয়োজিত করেন। তিনি সব সময় ইহরামের কাপড়ের মত সাদা কাপড় পড়তেন। চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন অবস্থান করে ইসলাম এবং মানবতার কল্যাণ করে ১১৮৭ হিজরীর ৩১ জিলক্বদ তারিখে ১২৫ বছর বয়সে ইন্তেকালের পর তাকে লালদীঘির পূর্বপাড়স্থ বর্তমান খানকাহ শরীফে দাফন করা হয়। তার মাজার শরীফ হচ্ছে চট্টগ্রামের তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

11) হযরত সুলতান বায়জীদ বোস্তামীর মাজার শরীফ, চট্টগ্রাম-
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রাম এর নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান।
এই সমাধির অবয়ব সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে পাহাড়ের উপরিভাগে একটি দেয়ালঘেরা আঙ্গিনার মাঝে আবিস্কার করা হয়। আঙ্গিনার ঠিক মাঝামাঝি একটি শবাধার অবস্থিত। পরবর্তীতে সমাধিস্থলটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ মোঘলরীতির আয়তাকার মসজিদ এবং একটি বিশালাকার দীঘি আছে। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত।
যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজার, ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়না। ধারণা করা হয় সুফী সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড় এর উপরে কিংবা জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব জায়গাতে মাজার কিংবা এই ধরণের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারটাও মূলত উনাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।
যদিও এলাকার জনশ্রূতি অনুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে অবস্থানের পরে প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান। এই জনশ্রুতির স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে। বায়েজীদ বোস্তামীকে যেহেতু সুলতান উল আরেফীন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় যেই সূত্রে এই শাহ সুলতান আর সুলতান উল আরেফীন কে একই ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
বোস্তামীর কাছিম
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি অবস্থিত। এর বাসিন্দা হিসাবে বোস্তামীর কাছিম ও গজার মাছ সুবিখ্যাত। আঞ্চলিকভাবে এদের মাজারী ও গজারী বলে আখ্যায়িত করা হয়। বোস্তামীর কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গন ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও এদের দেখা মিলে না। মাজারের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা মাজার তত্ত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়।
মাজারের ভক্তকূল ও আঞ্চলিক জনশ্রুতি অনুযায়ী মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপীষ্ঠ আত্মার পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামী তার এই অঞ্চলে ভ্রমনকালে এইসব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন এবং আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। 

12) ছোট সোনা মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-
ছোট সোনামসজিদ ‘সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন’ বলে আখ্যাত। এটি বাংলার রাজধানী গৌড়-লখনৌতির ফিরোজপুর কোয়াটার্স এর তাহখানা কমপ্লেক্স থেকে অর্ধ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং কোতোয়ালী দরওয়াজা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বিশাল এক দিঘির দক্ষিণপাড়ের পশ্চিম অংশ জুড়ে এর অবস্থান। মসজিদের কিছু দূর পশ্চিমে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তর কর্তৃক কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত একটি আধুনিক দ্বিতল গেষ্ট হাউস রয়েছে। গেষ্ট হাউস ও মসজিদের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে একটি আধুনিক রাস্তা চলে গেছে। মনে হয় রাস্তাটি পুরনো আমলের এবং একসময় এটি কোতোয়ালী দরওয়াজা হয়ে দক্ষিণের শহরতলীর সঙ্গে গৌড়-লখনৌতির মূল শহরের সংযোগ স্থাপন করেছিল।
প্রধান প্রবেশ পথের উপরিভাগে স্থাপিত একটি শিলালিপি অনুযায়ী জনৈক মজলিস-ই-মাজালিস মজলিস মনসুর ওয়ালী মুহম্মদ বিন আলী কর্তৃক মসজিদটি নির্মিত হয়। শিলালিপিতে নির্মানের সঠিক তারিখ সম্বলিত অক্ষরগুলি মুছে গেছে। তবে এতে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর নামের উল্লেখ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, মসজিদটি তার রাজত্বকালের (১৪৯৪-১৫১৯) কোন এক সময় নির্মিত।
কিভাবে যাওয়া যায়:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি.। বাস অথবা সিএনজি-তে যাওয়া যায়। প্রায় ৪৫ মি. থেকে ১ ঘন্টা সময় লাগে।

13) ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাগেরহাট-
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির গায়ে কোনো শিলালিপি নেই। তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো সে সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে এটি যে খান-ই-জাহান নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকে না। ধারণা করা হয় তিনি ১৫শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো। পাথরগুলো আনা হয়েছিলো রাজমহল থেকে। এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু।
সুলতান নসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট।
বহির্ভাগ
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানোসিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আযান দেবার ব্যবস্থা ছিলো। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নামআন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়, গম্বুজ, ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি। পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মত। বাকি ৭০টি গম্বুজ আধা গোলাকার।
অভ্যন্তরভাগ
মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে নামাযের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিলো দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদ্রাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত।
জনশ্রুতি আছে যে, হযরত খানজাহান (রঃ) ষাটগম্বু^জ মসজিদ নির্মাণের জন্য সমুদয় পাথর সুদুর চট্রগ্রাম, মতামত্মরে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা বলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। ইমারতটির গঠন বৈচিত্রে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ বিশাল মসজিদের চতুর্দিকে প্রাচীর ৮ফুট চওড়া, এর চার কোনে চারটি মিনার আছে। দক্ষিণ দিকের মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুঠির এবং এ মিনারে উপরে উঠার সিড়ি আছে। মসজিদটি ছোট ইট দিয়ে তৈরী, এর দৈর্ঘ্য ১৬০ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট, উচ্চতা ২২ফুট। মসজিদের সম্মুখ দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিলান এবং তার দুই পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ মোট ২৬টি দরজা আছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর বিভাগ পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য এ ঐতিহাসিক মসজিদ এবং খানজাহান (রঃ) এর মাজার শরীফের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে । ইউনেস্কো এ মসজিদটি বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অমত্মর্ভূক্ত করেছে।


সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...