Thursday, December 24, 2020

কসবা, শেরপুর এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য

শেরপুর জেলা শহরের পৌর এলাকার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কসবা একটি ঐতিহাসিক স্থান। শাহজাদা সুজা ১৬৩৯ থ্রিঃ থেকে ১৬৬০ থ্রিঃ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২১ বছর কাল রাজধানী স্থাপন করে অত্র অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। তাঁদের বসতবাড়ি খুব সম্ভব কাঠের স্থাপনা হতে পারে। কেননা তিনটি ইটের স্থাপনা ছাড়া আর কোন প্রমাণ অবশিষ্ঠ নেই । বসতবাড়ি নির্মাণ বা চাষাবাদের ফলেও তা ধ্বংস হতে পারে।
 
 কসবা মুঘল মসজিদ নির্মাণে ব্যাবহার করা হয় এই ব্লক
শেরপুর পরগণার প্রশাসনিক কেন্দ্র বিন্দু ছিল কসবা। কসবা একটি ফরাসি শব্দ । কসবা শব্দটির আভিধানিক অর্থ জনপদ অথবা উপশহর। ভারতবর্ষে সেইসময় মুসলিম শাসনামলে বিভিন্ন জনপদের এ নামকরণ করা হয়। কসবা গ্রামটি আয়তনে বেশ বড় এবং ছোট ছোট এলাকায় বা পাড়ায় বিভক্ত ও পৃথক পৃথক নাম ছিল ।

উক্ত সময়ে মোঘলরা তাঁদের বসত বাড়ীর পাশে একটি মসজিদ নির্মান করেন। এটিই কসবা মুঘল মসজিদ নামে পরিচিত ছিল। মসজিদটি কালক্রমে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে এই মসজিদকে ঘিরে যে ঘনবসতিপূর্ণ ছোট পাড়াটি গড়ে উঠেছে তাকে মুঘল পাড়া বলা হয়। এলাকাবাসী উক্ত স্থানে শাহী মসজিদ নামে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন ।
কসবা মুঘল মসজিদ এর স্থানে শাহী মসজিদ নামে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ
এখানে মোগল মসজিদ ছাড়াও মোগলদের শাসন কার্যের বেশকিছু নিদর্শন রয়েছে যেমনঃ কাঠগড়, কাচারীপাড়া, কাজীগলি ও কাজীগলি মসজিদ, মুঘল বাড়ীর চারদিকে জঙ্গলি পরিখা, কাঠগড় বা কাঠের কেল্লা ইত্যাদি । বর্তমানে জঙ্গলি পরিখা ছাড়া মুঘল বাড়ীর চারদিকের কোন চিহ্ন নেই । স্থানীয়রা জানায় বাড়ির ভেতরের পুকুরটি এখনও আছে যা তালা পুকুর নামে পরিচিত এবং মুঘল মসজিদটি ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেবে যায়। বসতবাড়ি স্থাপনের জন্য মুঘল বাড়ীর চিহ্নগুলোও হারিয়ে গিয়েছে । প্রত্নতত্ত বিভাগ বা সথানীয় প্রশাসন কেওই মোগলদের এই স্থানটি সংরক্ষণের কোন পদক্ষেপ নেইনি।
 
মুঘল বাড়ীর চারদিকে জঙ্গলি পরিখা
কসবাতে মোগলরা কাচারী স্থাপন করেছিলেন । কাচারীর সকল কাজ বর্তমান কসবা কাচারী পাড়ায় হত । কাচারী পাড়ায় কাচারীর কোন স্বৃতিচিহ্ন অবশিষ্ঠ নেই।  তবে তার পাশে কাজীগলি নামে একটি পাড়া আছে তাতে পুরনো একটি ভঙ্গুর মসজিদ চোখে পড়বে। ধারণা করা হয় কাজীর বাড়ী কাচারী বা বিচারালয় এর আশেপাশে কোথাও ছিল। যা খুব সম্ভব কাঠের স্থাপনা হতে পারে। কাচারীর পুরনো ভঙ্গুর মসজিদের ব্লকের ইটের সাথে মুঘল মসজিদের ইটের হূবূহূ মিল আছে। 
 
কাজীর মসজিদ
 এলাকাবাসীর দাবী কাচারীর প্রধান কাজীর কবরটি কাজীগলিতে বর্তমান কাজীগলি মসজিদের পূর্ব উত্তরে আছে।
কাজীর কবর
 কাজীর কবরের ব্লকের ইটের সাথে কাজীর মসজিদের ইটের এবং মোগল মসজিদের ইটের হূবূহূ মিল পাওয়া যায়।
কাজীর কবরের ব্লকের ইট
শাহজাদা সুজার বাংলার শাসন ভার গ্রহনের প্রথম পর্যায়ে মুঘলরা যখন বর্তমান শেরপুর শহরের কসবায় রাজধানীর কার্যক্রম আরম্ভ করেন তখনও হযরত শাহ কামাল (র.) জীবিত ছিলেন এবং দুরমুট বা বাকলাইতে অবস্থান করছিলেন। কসবায় বসবাসকারী মুঘলরা শাহ কামাল (র.) এর অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানতে পারেন এবং তাদের প্রশাসনিক কেন্দ্রের কাছে এনে কাজি গলির পশ্চিমে তাকে জায়গা প্রদান করে বসবাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। মাজারটি প্রায় একর ৭৬ শতাংশ জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এর পূর্ব পাশে একটি ঈদগাহ মাঠ এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি মসজিদ। মাজারটিতে হযরত শাহ কামাল (.) সহ তার সফরসঙ্গী, ব্যবহৃত ঘোড়া মাজারের তিনজন খাদেমের কবর রয়েছে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে এ স্থানটিই হযরত শাহ কামাল (র.) এর মাজার হিসেবে পরিচিত লাভ করে। তিনি ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। কথিত আছে, হযরত শাহ কামাল (.) ইন্তেকাল করার সংবাদটি একইসঙ্গে ৭টি স্থানে প্রচার হয়। স্থানগুলো হলো, জামালপুর জেলার দুরমুট কামালপুর, শেরপুর জেলা শহরের কসবা, নেত্রকোনা জেলার শাহ সুলতান রুমীর মাজার, ময়মনসিংহ জেলার সুসং দুর্গাপুর, চট্টগ্রামের বারো আউলিয়া দিল্লীর আব্দুল কাদের জিলানীর চিল খানায়।
 
শাহ কামাল (র.) এর মাজার
গারো পাড়াঃ
কসবা গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে ছোট নয়নাভিরাম সবুজ পাড়ার নাম গারো পাড়া। এখানে প্রায় ৩০-৪০ টি বাড়ি নিয়ে এ পাড়াটিতে প্রায় ২৫০-৩০০ লোকের বসবাস। এ পাড়ায় বর্তমানে শিশুদের শিক্ষার হার প্রায় ৯৫ ভাগ। বেশিরভাগ লোকজন কৃষিকাজ, দিনমজুর ও কিছু সংখ্যক লোক ব্যাবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে।
 
 
কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
মোগল মসজিদের স্থান ও পরিখা দেখতে চাইলে শেরপুর পৌর শহর থেকে পশ্চিম দিকে জেলা পরিষদ এবং খান বাড়ীর সামনে দিয়ে কসবা কাঠগড় এলাকায় যেতে হবে অথবা বাইরবাদ মসজিদের দক্ষিণ পাশের বাইপাস রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায়। শহর থেকে ৫-১০ টাকা অটো রিকশা ভাড়া। শাহ কামাল (র.) এর মাজার
দেখতে চাইলে শেরপুর পৌর শহর থেকে পশ্চিম দিকে লোকাল বাস স্ট্যান্ড এর পশ্চিমে  ৫ টাকা অটো রিকশা ভাড়া। কাজীর মসজিদ এবং কবর তার ৫০০-৭০০ মিটারের আশেপাশে। 
 
 

গবেষণা, অনুসন্ধান ও সংকলনঃ
 
জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।
torunsongo@gmail.com 

Tuesday, December 15, 2020

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি বিশেষ দিবস। প্রতিবছর বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এ কাজে বাংলাদেশীদের মধ্যে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল।

প্রেক্ষাপট

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে থাকায় স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়। পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ সনাক্ত করেন।

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে একটি গণকবর

অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। যা থেকে হত্যার পূর্বে তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল সে তথ্যও বের হয়ে আসে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন।

বুদ্ধিজীবী দিবস ও সম্পর্কিত বিষয়

১৯৭১ সালে বছরব্যাপী পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরিকল্পিতভাবে ১৪ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশীসংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এই দিনকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসঘোষণা করেন। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’ (১৯৯৪) থেকে জানা যায়, ২৩২ জন বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছেন। তবে তালিকায় অসম্পূর্ণতার কথাও একই গ্রন্থে স্বীকার করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৮, মতান্তরে ২৯ তারিখে বেসরকারীভাবে গঠিত বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। এরপর বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটিগঠিত হয়। এই কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চলেনি। কারণ ফরমান আলীর লক্ষ্য ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা। বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রধান জহির রায়হান বলেছিলেন, ‘এরা নির্ভুলভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনষ্ক বুদ্ধিজীবীদেরকে বাছাই করে আঘাত হেনেছে। তবে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান নিখোঁজ হন।

তাজউদ্দিন আহমেদ একটি তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর। কিন্ত, তার ঐ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনাটি পূর্বেই করা হয় আর এতে সহায়তা করে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘ। এ হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন ব্রি. জে. আসলাম, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্ণেল তাজ, কর্ণেল তাহের, ভিসি প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, ডঃ মোহর আলী, আল বদরের এবিএম খালেক মজুমদার, আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাইনুদ্দিন এদের নেতৃত্ব দেয় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।[৫]

১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় রমনা থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নম্বর ১৫)। সেখানে আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের বোন ফরিদা বানু।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হালি কুদ্দুস১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয় যা ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাএর নকশা করেন জামী-আল সাফী ও ফরিদউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ডাকবিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিটের সিরিজ প্রকাশ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকায়। ১৪৯ জন।

 

মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জেল হত্যা দিবস

সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান

জেল হত্যা দিবস আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রতি বছর ৩রা নভেম্বর পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতাঃ সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্বরণার্থে এ দিবস পালন করা হয়। 

 
ইতিহাস
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির মদদে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য সপরিবারে হত্যা করে। অভ্যুত্থানকারীরা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা দেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পূর্বে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কতিপয় সেনা কর্মকর্তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আ হ ম কামারুজ্জামানকে গুলি করে এবং সঙ্গিন দিয়ে বিদ্ধ করে হত্যা করে।
 
শিকার
• সৈয়দ নজরুল ইসলাম- বাংলাদেশের প্রথম সরকার, মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাকশালের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
• তাজউদ্দীন আহমদ- একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও ছিলেন।
• আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান- একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকারের স্বরাষ্ট্র,কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন।
• মুহাম্মদ মনসুর আলী- মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
 
বিচারকার্য
জেলহত্যার প্রায় ২৯ বছর পর এর বিচারকার্য শুরু হয়। ২০০৪ সালের ২০শে অক্টোবর বিচারের রায়ে তিনজন পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড, ১২ জন সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএনপির চারজন সিনিয়র নেতাসহ পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ২৮শে আগস্ট বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ জেলহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন সামরিক কর্মকর্তাকে খালাস দেয়। খালাসীদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দীন আহমেদকে ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ খালাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করে।
 
 
Source- উইকিপিডিয়া

Monday, December 7, 2020

৭ ডিসেম্বর - শেরপুর মুক্ত দিবস – এখান থেকেই শুরু বিজয়ের প্রস্তুতি

 
মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে। স্বাধীনতাযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে বর্তমান শেরপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ৩০ থেকে ৪০টি খণ্ডযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। এসব যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে ৫৯ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। পাক হানাদারদের নির্মমতার শিকার হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন, শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে ৫২ জন, ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ২০ জন মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হয়েছেন।

১লা এপ্রিল , ১৯৭১। ভারত সীমানার কাছাকাছি ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া কুম্ভিপাতার ক্যাম্পে স্থাপন করা হয় প্রশিক্ষণ শিবির। এ শিবিরে প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন শেরপুরের ১২ জন নির্ভীক যুবক । এরা হলেন মুমিনুল হক, মোঃ হযরত আলী হজু, আব্দুল ওয়াদুদ অদু, ফরিদুর রহমান ফরিদ, মোকসেদুর রহমান হিমু, কর্ণেল আরিফ, মাসুদ মিয়া, এমদাদুল হক নীলু, হাবিবুর রহমান ফনু, আশরাফ আলী আসাদ, শাহ তালাপতুপ হোসেন মঞ্জু, ইয়াকুব ।
 
১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাকিস্তান বাহিনী শেরপুর শহরে প্রবেশ করে। বিভিন্নস্থানে গড়ে তুলে ঘাঁটি। শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদনগর উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ঘাঁটিতে চালায় অত্যাচার। অন্যদিকে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আঘাত হানতে থাকে শত্রু শিবিরে। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই শত্রু বাহিনীর মনোবল ভাঙ্গতে থাকে এবং পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। ১১ নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের বেশ কয়েকবার কামালপুর দুর্গে আক্রমণ চালান। ১১ দিন অবরোধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর এই ঘাঁটির পতন হয়। মোট ২২০ জন পাকিস্তানি সেনা এবং বিপুল সংখ্যক রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার সদস্য বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।
 
১ ডিসেম্বর নালিতাবাড়ীকে শত্রুমুক্ত করতে প্রথম আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু সফল হতে পারেনি তারা। ওইদিন দুই যোদ্ধা শহীদ হন। রাজাকাররা দুই যোদ্ধার মরদেহ নিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠে। তাদের পায়ে রশি বেঁধে টেনে নিয়ে শহরের অদূরে মাটি চাপা দেয়।
 
৪ ডিসেম্বর কামালপুরের ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু আক্রমণ ও গুলি বর্ষণের মুখে স্থানীয় পাকসেনারা পিছু হটে। ৫ ডিসেম্বর থেকে পাকসেনারা তল্পিতল্পা বেঁধে কামালপুর-বক্সিগঞ্জ থেকে শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলা হয়ে শেরপুর শহর হয়ে জামালপুর অভিমুখে রওনা হয়। অবশেষে পাকসেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতের আধারে শেরপুর শহরের উপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এরপর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর। গৌরবগাঁথা সে দিনটির কথা শেরপুরবাসীর স্মৃতিতে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।
 
এদিন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রয়াত জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টারযোগে নেমে শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে এক সংবর্ধনা সভায় শেরপুরকে মুক্ত বলে ঘোষণা দেন।
 
এসময় মুক্ত শেরপুরে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এসময় ‘জয়বাংলা’ স্লোগানে উপস্থিত জনতা চারদিক মুখরিত করে তোলে। এখানে দাঁড়িয়েই জগজিৎ সিং অরোরা বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, মস্কো, আকাশবাণীসহ বিভিন্ন বেতার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঢাকা মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
 
স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ দেশপ্রেম, অসীম সাহসিকতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে শেরপুর জেলার একজন মরণোত্তর বীর বীরবিক্রম (শহীদ শাহ মু'তাসীম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম), দুইজন বীর প্রতীক উপাধি পেয়েছেন (কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সি বীর প্রতীক ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীর প্রতীক)। এ তিন বীর সন্তানই শ্রীবরদী উপজেলার বাসিন্দা।
 
শহীদ বীর বিক্রম শাহ মোতাসিম বিল্লাহ খুররম ১৯৫১ সালের ২০ নভেম্বর তৎকালীন জামালপুর মহকুমার শ্রীবরদি থানার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের মলামারী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত প্রগতিশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম শাহ মো. মোশাররফ হোসেন এবং মা বেগম ফজিলাতুন নেছা। খুররম ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোরে জামালপুর শহরকে পাকহানাদার মুক্ত করার শেষ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে শহরের বেলটিয়ায় সন্মুখ যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে সহযোদ্ধারা পাঠিয়ে দেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তাকে সমাহিত করা হয়। খুররম ছিলেন তার দলের উপদলনেতা।
 
শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন:
আহমদ নগর :
মুক্তিযুদ্ধকালীন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার আহমদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করে হানাদার বাহিনী। এটি ছিল পাক হানাদার বাহিনীর আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টার। পাকবাহিনী এবং তাদের দোসররা আহমদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়কে নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করে। একাত্তুরে ৯ মাসই এখানে চলে তাদের নৃশংসতা। পাকিস্তানি পশুরা নারী-পুরুষের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালানোর পর তাদের বগাডুবি ব্রিজে নিয়ে অথবা কোয়ারি রোড, জুলগাঁওয়ে হত্যার পর এসব লাশ মাটিচাপা দিত অথবা নদীতে ভাসিয়ে দিত। স্বাধীনতার পর আহমদ নগর স্কুল ও তার আশপাশ এলাকায় অসংখ্য কঙ্কাল পাওয়া যায়।
 
জগৎপুর :
ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ১৯৭১ সনের ৩০ এপ্রিল গণহত্যা চালানো হয়। এদিন এই গ্রামের ৪২ জন হিন্দু পরিবারের সদস্যসহ মোট ৫৮ জন নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়। পুড়ে ছারখার করে দেয়া হয় বাড়িঘর।
 
নাকুগাঁও :
১৯৭১ সালের ২৫ মে নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্তের ভোগাই নদী পার হয়ে পাকহানাদার বাহিনী ভারতের বারাঙ্গাপাড়া থানার ডালুতে গণহত্যা চালায়। এ সময় বাংলাদেশ থেকে ডালুতে আশ্রয় নেয়া মুক্তিকামী মানুষ ও ভারতীয় নাগরিকসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষ নিহত হয়। পাক হানাদারদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে ৯ জন বিএসএফ সদস্য।
ভারতের কাটাতার ঘেঁষা এই নাকুগাঁওয়ে গণহত্যার শিকার বাংলাদেশি মুসলমানদের লাশ দাফন করা হয়। এছাড়াও ৯ মাসে এ স্থানে বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেয়া হয়।
 
তন্তর :
নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া-মন্ডালিয়াপাড়া ইউনিয়নের তন্তর গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ঘাঁটি। ১৯৭১ সালের ৩০ জুন পাকহানাদার বাহিনী আলবদর-রাজাকারদের নিয়ে ওই গ্রামে হামলা চালায়। এসময় তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ মোট ৭ জন শহীদ হন।
 
কাঁটাখালি ব্রিজ এবং রাঙ্গামাটি খাটুয়ামাড়ি গ্রাম :
শেরপুর-ঝিনাইগাতী-নালিতাবাড়ী সড়কের কাঁটাখালি ব্রিজ। এ ব্রিজটিই ছিল তখন সীমান্ত যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তাই পাকহানাদারদের সীমান্ত এলাকায় অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে এ ব্রিজটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু পর পর দু’বার অপারেশন করেও সফল না হওয়ার পর এ ব্রিজ অপারেশনে আসেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্র নাজমুল আহসান। ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে তিনি তার ৫৩ জন সহযোদ্ধাদের নিয়ে কাঁটাখালি ব্রিজ এবং তিনানি ফেরি ধ্বংসের সফল অপারেশন শেষে ঝিনাইগাতীর রাঙামাটি-খাটুয়ামারি গ্রামে আশ্রয় নেন। 
 
পরদিন ৬ জুলাই এ গ্রামের দালাল জালাল মিস্ত্রির সহযোগিতায় পাকসেনারা তিনদিক পানিবেষ্টিত গ্রামটিতে হামলা চালায়। এ সময় সন্মুখ যুদ্ধে কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান, তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন, ভাইপো আলী হোসেন শহীদ হন। আহত হন বেশ ক’জন। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে ৯ জন গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা ও ৬ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়।
 
সোহাগপুর বিধবা পল্লী:
নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা তাণ্ডব চালিয়ে ওই গ্রামের ১৮৭ জন পুরুষকে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর গ্রামটি প্রথমে বিধবাপাড়া ও পরে ১ বিধবাপল্লী’ হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করে। এ গ্রামে এখনো রয়েছে ৫৯টি গণকবর।
 
সূর্যদি গ্রাম :
চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাত্র ২১ দিন আগে শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদি গ্রামে ঘটে এক নারকীয় গণহত্যা। ১৯৭১ সনের ২৪ নভেম্বর এই গ্রামে পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের নারকীয়তার শিকার হন এক মুক্তিযোদ্ধাসহ ৬২ জন গ্রামবাসী।
 
রামচন্দ্রকুড়া ফরেস্ট ক্যাম্প :
নালিতাবাড়ী উপজেলার এই ফরেস্ট ক্যাম্পটি ছিল পাকসেনাদের ঘাঁটি। যুদ্ধের ৯ মাস এখানে বহু মানুষকে নির্য়াতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। ধর্ষণ করা হয় নারীদের। স্বাধীনতার পর এখানকার কূপ থেকে উদ্ধার করা হয় অসংখ্য কঙ্কাল। 
 
এছাড়াও জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার নকশী, নকলার নারায়ণখোলা, শ্রীবরদীর কাকিলাকুড়া গ্রামে বীরবিক্রম শাহ মুতাসীন বিল্লাহ খুররমের সমাধিস্থল। শেরপুর শহরের শেরিব্রিজ, সুরেন্দ্র সাহার বাড়ির আলবদরদের টর্চার সেল, সদর থানার সামনে অ্যাডভোকেট এম এ সামাদ সাহেবের বাড়ির বধ্যভূমি, জেলা প্রশাসকের বাংলোর পাশে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির কার্যালয়সহ নানা জায়গা মহান মুক্তিযুদ্ধের নিরব স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী এসব স্থান সংরক্ষণ ও পরিচর্যার উদ্যোগই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি প্রকৃত সম্মান ও ভালবাসা। 
 
বধ্যভূমি ও গণকবর : ১৩ টি (আহমদনগর-ঝিনাইগাতী, কোয়ারী রোড-ঝিনাইগাতী, বগাডুবি ব্রিজ-ঝিনাইগাতী, রাঙামাটিয়া-ঝিনাইগাতী, নাকুগাঁও-নালিতাবাড়ী, সোহাগপুর বিধবাপল্লী-নালিতাবাড়ী, রামচন্দ্রকুড়া ফরেস্ট বিট অফিস-নালিতাবাড়ী, কর্ণঝোড়া-শ্রীবরদী, বালিজুড়ি-শ্রীবরদী, জগৎপুর-শ্রীবরদী, শেরী ব্রিজ-শেরপুর সদর ও থানার সম্মুখে সামাদ সাহেবের বাড়ি-শেরপুর সদর)।
 
(অনলাইন কালেকশন)

মলামারী গ্রামটাকে "শহীদ খুররম নগর" হিসেবে দেখতে চান শহীদ বীর বিক্রম শাহ মোতাসিম বিল্লাহ খুররম এলাকার সাধারন জনগন তাঁর পরিবার (আজ ১০ ডিসেম্বর)।

ছবিঃ শহীদ বীর বিক্রম শাহ মোতাসিম বিল্লাহ খুররম এর দুই ভাইয়ের সাথে তরুণরা। (২০১৮)

 
শহীদ বীর বিক্রম শাহ মোতাসিম বিল্লাহ খুররম ১৯৫১ সালের ২০ নভেম্বর তৎকালীন জামালপুর মহকুমার এই শ্রীবরদি থানার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের মলামারী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত প্রগতিশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম শাহ মো. মোশাররফ হোসেন এবং মা বেগম ফজিলাতুন নেছা। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ১৯৭১ সালে বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন মোতাসিম বিল্লাহ খুররম। খুররম ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে অসীম সাহস প্রদর্শন করেন। তিনি দুভাষী হিসেবেও কাজ করতেন। তিনি দৃঢ়চেতা স্বভাবের ছিলেন।

৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রয়াত জগজিৎ সিং অরোরার সংবর্ধনা সভায় যোগদান না করে জামালপুর মুক্ত করে শান্ত হবার শপদ নিয়েছিলেন।
 
এই কৃতি সন্তান সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোরে জামালপুর শহরকে পাকহানাদার মুক্ত করার শেষ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে শহরের বেলটিয়ায় সন্মুখ যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে সহযোদ্ধারা পাঠিয়ে দেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তাকে সমাহিত করা হয়। খুররম ছিলেন তার দলের উপদলনেতা।
 
এলাকার সাধারন জনগন এবং শহীদ বীর বিক্রম শাহ মোতাসিম বিল্লাহ খুররম এর পরিবার মলামারী গ্রামটাকে "শহীদ খুররম নগর" হিসেবে দেখতে চান।
 
তাঁর অসীম সাহসিকতা, মেধা এবং বিজয়ের নেশা সহযোদ্ধার আজও কাঁদায়। এই মহান মুক্তিযোদ্ধাকে আজ সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

Monday, November 23, 2020

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া খান মসজিদ

 শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া খান মসজিদ
মুঘল আমলে স্থাপিত এই মসজিদটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঘাঘড়া খান বাড়ি জামে মসজিদ মুঘল আমলে নির্মিত হয়। মসজিদের দরজায় কষ্টি পাথরে খোদাই করা আরবি ভাষায় নির্মাণকাল দেওয়া আছে হিজরী ১০২৮ সাল বা ইংরেজি ১৬০৮ সাল।
 
 মসজিদের গাঁয়ের নিদর্শন থেকে ধারণা করা হয় মসজিদটি বক্সার বিদ্রোহী হিরঙ্গী খানের সময়কালে নির্মাণ করা হয়েছিল। আজিমোল্লাহ খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে অনুমান করা হয়। মসজিদটির ব্যাপারে কথিত আছে ‘পালানো খা’ ও জববার খা দুই সহোদর কোনো এক রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। পরাজিত হয়ে ভ্রাতৃদ্বয় এই অরণ্যে আশ্রয় নেন এবং সেখানে এই মসজিদ টি স্থাপন করেন। আরও জনশ্রুতি রয়েছে যে নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ের পর তাঁর সৈন্যদের অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যান। এমনি একজন পলাতক যোদ্ধা হলেন আজিমোল্লাহ খান, যিনি পালিয়ে আসেন ঝিনাইগাতীর ঘাগড়া লস্করপাড়া গ্রামে। এখানেই তিনি স্থায়ী হন এবং নির্মান করেন এই ‘খান বাড়ী জামে মসজিদ’। পালিয়ে আসার জন্য আজিমোল্লাহ খান এখানে ‘পলায়ন খা’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
 
মসজিদটির বিশেষত হল, এর ইটগুলো চারকোণা টালির মত। আজ থেকে ছয়/সাতশত বছর পূর্বে এই ইটগুলির ব্যবহার ছিল। আস্তরণ বা পলেস্তার ঝিনুক চূর্ণ অথবা ঝিনুকের লালার সাথে সুড়কি, পাট’ বা তন্তুজাতীয় আঁশ ব্যবহার করেছে। এক গমবুজ বিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণ কৌশল গ্রীক ও কোরিন থিয়ান রীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। প্রবেশ পথের উপর রয়েছে আরবি ভাষায় নির্মাণকাল ও পরিচয় শিলা লিপি দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, সেই যুগেও স্থপতি এ অঞ্চলে ছিল। মসজিদটি পুরাকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন। যা দেখে যে কোন পর্যটক আকৃষ্ট হবেন, বিমোহিত হবেন। মসজিদটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে মসজিদটির রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অদিদপ্তর।
 
মসজিদের ভিতরে দুটি সুদৃঢ় খিলান রয়েছে। মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট এবং এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩০ ফুট। মাঝখানে গম্বুজে ছোটবড় ১০টি মিনার রয়েছে। পূর্বদিকে একটি দরজা রয়েছে। ভিতরে মেহরাব ও দেয়ালে বিভিন্ন রঙের ও কারুকার্য করা ফুল ও ফুলদানি আঁকা আছে। মসজিদের দেয়ালের গাথুনী চুন ও সুরকি দিয়ে গাথা যার প্রস্ত ৪ ফুট। মসজিদের মোট জমি ৫৮ শতাংশ যা তৎকালীন খান বাড়ির লোকজন ও গ্রামের অনেকে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দিয়ে গেছে। মসজিদের মূল ভবন ও বারান্দা ১৭ শতাংশ এবং বাকি ৪১ শতাংশ জায়গায় রয়েছে কবরস্থান।
 
মসজিদের ভেতর ইমাম ছাড়া তিনটি কাতারে ১২ জন করে একসঙ্গে ৩৬ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে আরও প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের বর্তমান ইমাম জুম্মাসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান।

কিভাবে যাবেন:-

লস্কর খানবাড়ী মসজিদটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে।  সড়ক পথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব ২০৩ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়। শেরপুর জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার।

Saturday, November 14, 2020

মাইসাহেবা জামে মসজিদ, শেরপুর।

শেরপুর শহরের একটি পুরনো ঐতিহ্য হল "মাইসাহেবা জামে মসজিদ"। শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে শেরপুর সরকারি কলেজর দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত। আনুমানিক ২৫০ বৎসর পূর্বে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। জেলার প্রাচীন নিদর্শনের এটি একটি। বক্রাকারে খিলানের ব্যবহার এবং সুউচ্চ মীনার ২টি সত্যি দৃষ্টিনন্দিত। স্থাপত্য কলার আধুনিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এই মসজিদটিতে। এটি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। শেরপুর শহরের প্রবেশের সময় এর মিনার দুটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। শেরপুর শহরে প্রবেশের পর যে কারো এই মসজিদটি দৃষ্টি কাড়বে।

শেরপুরের তিন আনি জমিদার মুক্তাগাছা জমিদার কে দাওয়াত করেছিলেন। দাওয়াতের উত্তরে মুক্তাগাছার জমিদার বিশ্রাম করার জন্য শেরপুরে একটি জায়গা চান। তখন মসজিদের এই স্থানে জমিদারের খাজনা আদায়ের ঘরের পাশে একটি ঘর ছিল, শেরপুরের জমিদার এই জায়গা মুক্তাগাছার জমিদার কে দেবে
বলে মনস্থির করেন এবং হাতি দিয়ে ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার আদেশ করেন। কিন্তু হাতি যখনি ঘরটির কাছে আসে তখনই সালাম দিয়ে বসে যায়। খবর পেয়ে তিন আনি জমিদার এসে দেখি ঘরের ভিতর একজন মহিলা সৃষ্টিকর্তার উপাসনায় মগ্ন জমিদার বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চেয়ে চলে আসেন। সেই ধর্মপ্রান মহিলার নামই মাইসাহেবা। তার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে যে মসজিদটি নির্মাণ করেন তার নাম দেন "মাইসাহেবা মসজিদ"।

বহুতল বিশিষ্ট এই মসজিদে একসাথে প্রায় ৯০০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে। প্রতি শুক্রবারে শহরের বাহির থেকেও অনেক মুসল্লিগণ নামাজ আদায় করতে আসে এ মসজিদে। বিশাল এই মসজিদের সামনের অংশে অনেক জায়গা রয়েছে। এখানে প্রতি বছর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। 



সংকলন- মোঃ নাজিমুল হাসান খান।

পানিহাটা-তারানি পাহাড়, শেরপুর।

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশের চির সবুজ প্রকৃতি সর্বদা আর্কষণ করে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের। দেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পাহাড়-নদী, খাল-বিল ও সবুজ অরণ্যঘেরা প্রকৃতি। তেমনি একটি স্থান শেরপুরের পানিহাটা-তাড়ানি পাহাড়। 

পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময় এই স্থানটির অবস্থান শেরপুর জেলায়। শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত পানিহাটা-তারানি পাহাড়। মূলত পানিহাটা গ্রামের একটি অংশে রয়েছে তারানি গ্রামের পাহাড়। আর এ দুয়ে মিলেই পর্যটকদের কাছে এ অঞ্চলটির পরিচিতি গড়ে উঠেছে পানিহাটা-তারানি পাহাড় নামে।

প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার অপরূপা পানিহাটা-তারানি পাহাড়। মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি দৃশ্য যে কোন প্রকৃতি প্রেমীর মনকে কাছে টানবে। আর তাই পানিহাটা-তারানি পাহাড়ি এলাকা হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। পানিহাটা নামের স্থানটির একটা অংশে রয়েছে তারানি গ্রামের পাহাড়। তাই দর্শণার্থীদের জন্য পানিহাটা-তারানি দুটো মিলেই গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র । একঘেয়ে জীবন, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মনকে প্রফুল্ল করতে শহর ছেড়ে ঘুরে আসুন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউপির পানিহাটা-তারানি পাহাড় এলাকা।
 
এখানে দেখতে পাবেন উত্তরে ভারতের তুরা পাহাড়কে আবছা আবরণে ঢেকে আছে মেঘ-কুয়াশা। দূরের টিলাগুলো মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে যেন। তুরার অববাহিকা থেকে সামনে সোজা এসে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই। নদীর একপাশে শত ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে জড়ানো পাহাড়। নদীর টলটলে পানির নিচে নুড়ি পাথরগুলো ঝিকিমিকি করছে। সামনের একশ গজ দূরে ভারত অংশে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে মাঝেমধ্যেই হুসহাস করে ছুটে চলছে মালবাহী ট্রাকগুলো। চতুর্দিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের সাড়ি। 
 
কিভাবে যাওয়া যায়: 

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার এবং শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এ স্থানটি। তবে ঢাকা থেকে শেরপুর জেলা শহরে না এসেই নকলা উপজেলা শহর থেকেই নালিতাবাড়ী যাওয়ার সহজ ও কম দূরত্বের রাস্তা রয়েছে। এরপর নালিতাবাড়ী শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় হয়ে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের কাছাকাছি গিয়ে পূর্ব দিকটায় মোড় নিয়ে ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হয়। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গেলে চায়না মোড়। এ মোড়ে এসে আবারও গতিপথ বদলে যেতে হয় উত্তরে। উত্তরের এ রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির মূল পয়েন্ট। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিকশা, সিএনজি অটোরিশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় নালিতাবাড়ী শহর থেকে মাত্র ৩৫-৪৫ মিনিটের ব্যবধানে এবং অল্প খরচের মধ্যেই। এতে মোটরসাইকেল ভাড়া আসা-যাওয়ায় প্রায় ১ শ ৫০ টাকা। 
 
 
 
 
 
সংকলন-  মোঃ নাজিমুল হাসান খান।

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...