Monday, December 9, 2019

ঐতিহাসিক নিদর্শন সুতানাল দীঘি, শেরপুর


অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশের চির সবুজ প্রকৃতি সর্বদা আর্কষণ করে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের। দেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পাহাড়-নদী, খাল-বিল সবুজ অরণ্যঘেরা প্রকৃতি। তেমনি একটি স্থান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্যতম ঐতিহাসিক দীঘি কমলা রাণীর দীঘি বা সুতানাল দিঘি বা বিরহীনি দীঘি। তবে প্রাচীন কালের দীঘিটি এলাকায় সুতানাল দীঘি নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

বিশাল দীঘির নামকরণে রয়েছে চমকপ্রদ প্রাচীন কাহিনী। ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত দীঘিটি। দীঘিটি কে কখন কোন উদ্দেশ্যে খনন করেছিলেন তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি আজো। তবে অনেকেই বলেন, মোঘল আমলের শেষের দিকে গ্রামে কোনো এক সামন্ত রাজার বাড়ি ছিল। আবার কেউ বলেন, এখানে একটি বৌদ্ধ-বিহার ছিল। অনেকেই বলেন খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মধ্যমকুড়া গ্রামে সশাল নামে এক গারো রাজা রাজত্ব করতেন। তাঁর আমলেই এই দীঘি খনন করা হয়।

কথিত আছে, রাণী বিহরণী সামন্ত রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি কী আমাকে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে কিছু দিতে চাও? তাহলে এমন কিছু দাও যা যুগ-যুগ ধরে মানুষ আমাকে মনে রাখবে। তখন রাজবংশী সামন্ত রাজা রাণীকে খুশি করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন। চরকীর সাহায্যে অবিরাম একদিন একরাত সুতা কাটা হবে। দৈর্ঘ্যে যে পরিমান সুতা হবে। সে পরিমান সুতার সমান লম্বা এবং প্রশস্ত একটি দীঘি খনন করা হবে। ওই দীঘির জল জনগণ ব্যাবহার করবে আর তোমাকে স্বরণ করে রাখবে।

তাঁর আমলেই এই দীঘি খনন করা হয়।দীঘিমধ্যে ছোট্ট ভূ-খন্ডের উপর একটি সুন্দর ঘর ছিল সেখানে রাজা রাত্রি যাপন করতেন। ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী চতুর্দিকে টহল দিত। কালক্রমে ভূ-খন্ডটি ধ্বসে গেছে। রাজার শেষ বংশধর ছিলেন তাঁর রাণী বিরহীনি।

দীর্ঘদিন দীঘিটি পরিত্যক্ত থাকায় জলের ওপর শৈবাল জমে গজিয়ে উঠে ঘাস। যার উপর দিয়ে গরু অবাধে ঘাস খেতে পারত। ১৯৭২ সালে প্রথম দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৮৩ সালে দীঘিটি কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সুতানাল দীঘিপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি। ১৯৮৪ সালে সমিতিটি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়। সমিতির সব সদস্যরা দীঘির পাড়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। দীঘিটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর অক্টোবর মাসে এখানে সৌখিন মৎস্য শিকারীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সারাদেশ থেকে আসা মৎস্য শিকারীরা সমিতির দেয়া টিকিটের মাধ্যমে মাছ শিকার করে থাকেন। দীঘির মাছ খুব সুস্বাদু।

কিভাবে যাবেন:-
সড়ক পথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়। শেরপুর থেকে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায় সিএনজি করে, অথবা নকলা নেমে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায় নালিতাবাড়ী আড়াইআনী বাজার হতে সুতিয়ারপাড় বাজার হয়ে শালমারা রাস্তায় যাওয়া যায়। টেম্পু, অটোরিক্সা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।

 সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

No comments:

Post a Comment

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...