Wednesday, December 4, 2019

মধুটিলা ইকোপার্ক, শেরপুর

মধুটিলা ইকোপার্ক বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত অন্যতম একটি পরিবেশ উদ্যান। ১৯৯৯ সালে এই বনকে পরিবেশ-উদ্যান বা ইকোপার্ক ঘোষণা দেয়া হয়। এই পার্কের আয়তন ৩৮৩ একর। ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার ইহা নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন পোড়াগাও অবস্থিত এখানে আছে সাইটভিট টাওয়ার, লেক, প্যাডেল বোট, স্টার ব্রিজ, মিনি চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, রেস্টহাউসসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়াও আছে ঔষধি  সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির গাছ, মৌসুমি ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। পার্কটিতে জীববৈচিত্র্য  প্রাণীর সমাহারও চোখে পড়বে।

লিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমেশ্চুড়া বন বীটের আওতায় ৩৮৩ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারিভাবে ২০০০ সালে নির্মিত হয়মধুটিলা ইকোর্পাক তথা পিকনিক স্পট। স্থাপনকাল থেকেই শীত মৌসুমে পার্কে পর্যটকরা ভীড় জমিয়ে আসছেন। ইকোপার্কটিতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থী ভ্রমণপিয়াসীরা ভীড় জমাচ্ছেন।

শেরপুরের নলিতাবাড়িতে অবস্থিত মধুটিলা ইকো পার্কটি সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশেও অবস্থিত। তুরা পাহাড় এখানেই অবস্থিত। শেরপুর শহর থেকে এখানে পৌছাতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগবে। এখানে নানা ধরনের গাছপালা জীবজন্তু রয়েছে। গজনি দেখে শেরপুরে ফেরার পথে আপনি মধুটিলাতেও যেতে পারেন। এখান থেকে ভারতের মেঘালয়ের গাছ, প্রাণী, ঝর্ণা, পাহাড় লেক দেখা যায়।

পাহাড়ের চূড়ায় সাইট ভিউ টাওয়ারে উঠলেই চোখ জুড়িয়ে যায় সীমান্ত পেরিয়ে উঁচু উঁচু পাহাড় আর সবুজ অরণ্যের মনোরম দৃশ্য দেখে। দূরের অরণ্যকে একটু কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হলেও এর সৌন্দর্যের কোনো কমতি নেই। গারো পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে যত দূর এগোনো যায়, ততই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহ। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে এই মধুটিলা ইকোপার্কটির অবস্থান। 
পার্কের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই নজরে পড়বে উঁচু গাছের সারি। রাস্তা থেকে ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দুই পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। রেস্তোরাঁ পেরোলে পাহাড়ি ঢালুর আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাহাড়ের প্রবেশপথেই অভ্যর্থনা জানাবে ধূসর রঙের বিশাল আকৃতির শুঁড় উঁচানো পাথরের তৈরি দুটি হাতি।

এরপর যত এগোনো যাবে, ততই মন ভরে যাবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে। পথে বুনো গাছপালার ফাঁকে ফুটে আছে হরেক রকমের বুনোফুল, তাতে বাহারি প্রজাপতির বিচরণ। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার পথে ঝোপঝাড়ে দেখা মিলবে হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, হ্রদের ধারে কুমির, ব্যাঙ আর মৎস্যকন্যার অতি চমৎকার সব ভাস্কর্য। আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে ঘন ঘন গাছের সারি গভীর অরণ্যের দিকে চলে গেছে। এখানে উঁচু পাহাড়ের গাছের ছায়ায় বসে কাটানো যাবে দুপুর বিকেল।
ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি পাঁচ টাকায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে আলাদা ফি দিয়ে হ্রদে প্যাডেল বোট চালিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ভারতে অবস্থিত উঁচু উঁচু পাহাড় আর সীমান্তবর্তী সবুজ গারো পাহাড় দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো হলে ওয়াচ টাওয়ার থেকেই মিলতে পারে বুনোহাতির দলের দেখা। তারা সাধারণত শেষ বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় গভীর অরণ্য থেকে নেমে আসে।

বিভিন্ন রাইড নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুদের খেলাধুলা বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক। এখানে ভ্রমণপ্রিয়দের দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় মহুয়া রেস্টহাউস। এটি ব্যবহার করতে চাইলে ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগের অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। ছাড়া এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্যকেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যানটিন, মিনি চিড়িয়াখানা। ঔষধি সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ, মৌসুমি ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পটও। পার্কটিতে জীববৈচিত্র্য প্রাণীর সমাহারও চোখে পড়বে।

এখানে বসবাসকারী মানুষের অর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এই ইকো পার্কটির রয়েছে অনেক অবদান কারন প্রায় ১২.% মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য এই পার্কের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঘন সবুজ পরিবেশকে বলা যেতে পারে এই ইকো পার্কের মূল আকর্ষণ। ইকো পার্কটি প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে এই এলাকায় বেকারত্বের সংখ্যা ২১% থেকে কমে দাড়ায় ১৩%, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪৬% থেকে কমে দাড়ায় ৩৪% এবং শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ১৭% থেকে বেড়ে দাড়ায় ২১.% যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জনবলের সংকট হল এই পার্কটির সবচেয়ে বড় সমস্যা। ভারত থেকে আসা বন্য হাতির অতর্কিত আক্রমন স্থানীয়দের কাছে একটি বড় সমস্যা যা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। যথাযথ সরকারি পদক্ষেপ এবং উন্নয়নের টেকসই কৌশল গ্রহন করলে এই পার্কটি এলাকার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে।

সকাল ১০ টা থেকে বিকাল টা পর্যন্ত থাকতে পারবেন এখানে। সপ্তাহে সাতদিন খোলা। পিকনিক স্পট ভাড়া নেবার জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন। ঢাকা থেকে পিকনিকের জন্যে যদি যেতে চান, তাহলে খুব ভোরে রওনা দিয়ে দুপুর নাগাদ মধুটিলা পৌঁছাতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে জার্নির ধকলটা বেশি পড়বে।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরে আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। নন্নী বাজার থেকে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ভাড়ায় পাওয়া যায়। শেরপুর থেকে ভাড়ায় মাইক্রোবাস, অটোরিকশা অথবা মোটরসাইকেলে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যাবে। অথবা ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি নালিতাবাড়ী পর্যন্ত গেটলক সার্ভিস রয়েছে। জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা। নালিতাবাড়ী থেকে অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে ২০-২৫ মিনিটে মধুটিলায় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া যায়। তবে ইচ্ছে করলে শেরপুর শহরে থাকতে পারেন এক রাত।  শেরপুরের হোটেল সম্পদ-এর নম্বর: ০১৭১৮২৯০৪৪৭।


মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
 সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

No comments:

Post a Comment

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...