Monday, December 23, 2019

শীতে চুলকানির সমস্যা এড়াতে যা করবেন

শীত পছন্দ করেনা এমন লোক বাংলাদেশে কমই পাওয়া যাবে। শীতকাল মানেই পিকনিক, কমলালেবু, ব্যাটমিন্টনের বহু প্রতিক্ষীত শীতের জন্য পুরো দমে প্রস্তুত ‘বাঙালি জাতি’। কিন্তু এই আমেজের ছন্দ কাটে বেশ কয়েকটা ছোটোখাটো শারীরিক সমস্যায়।

ছবির কপিরাইট
কী কী সমস্যা হয়?


১. ইকথায়োসিস (হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত এমনকি সর্বাঙ্গ শুকিয়ে খোসার মতো আঁশ উঠতে থাকে) সারা বছর থাকলেও এর প্রকোপ বাড়ে শুষ্ক শীতকালেই।
২. সেনাইল জেরোটিক প্রুরাইটাস (সারা গা শুকিয়ে চুলকানির তৈরি হয়)। চল্লিশোর্ধ্বদেরই এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি।
৩. সোরাইসিস বা সোরিওসিস-এর সমস্যা (এই রোগে মাথা, হাঁটু, কনুই-সহ সারা শরীরে মাছের আঁশের মতো খোসা ওঠতে থাকে)।
৪. যে সব শিশুদের অ্যাটোপিক ডার্মাটাইসিস (এগজিমা) রয়েছে, তাদের এই রোগ বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে শীতে।
৫. এ ছাড়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, উলের পোশাক অর্থাৎ সোয়েটার, মাফলার, টুপি ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জির সমস্যা হয়। আসলে সিনথেটিক উল সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এসে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে।
৬. খুশকির সমস্যা। শীতকালে নিয়মিত স্নান না করায় মৃত কোষ এবং ধূলিকণা জমে যায় চুলের গোড়ায়। এর থেকে খুশকির সমস্যা বেড়ে গিয়ে অত্যধিক পরিমানে চুল উঠতে থাকে।

সমাধান:


১. শীতকালে যাঁরা বিশেষ সমস্যায় ভোগেন, শীতের গোড়াতেই তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
২. প্রথমেই খেয়াল রাখুন যাতে সবসময় আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে। স্নানের আগে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মাখুন। তবে সর্ষের তেল একেবারেই ব্যবহার করবেন না। কারণ, বিশুদ্ধ না হওয়ার ফলে ত্বকের সমস্যা বাড়তে পারে।
৩. শীতকালে গোসলের সময় সাবান ব্যবহার না করাই ভাল। এ ক্ষেত্রে সিনথেটিক ডিটার্জেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের সাবানে চামড়ার ওপর থেকে তেলের স্তর ওঠে যাওয়ার সম্ভবনা নেই। শীতকালে জীবানুনাশক সাবান একেবারেই ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতির পরিমান বেড়ে যায়। গরম পানিতে গোসল করতে আরাম হয় ঠিকই, কিন্তু খুব গরম পানিতে আপনার ত্বকের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠবে। হালকা গরম পানিতে গোসল করুন, খুব কড়া সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। লুফা বা জালি দিয়ে খুব রগড়ে ত্বক পরিষ্কার করারও কোনো প্রয়োজন নেই। ত্বক ভেজা থাকতে থাকতেই ময়েশ্চরাইজার লাগান।

৪. গোসলের পরে এবং রাতে ঘুমানোর সময় অন্তত দু’বার ময়েশ্চরাইজার মাখুন।
৫. ঠোঁট ফাটার সমস্যায় গ্লিসারিন ব্যবহার করুন।
৬. প্রচুর পরিমানে পানি খান, এর ফলে শরীরের আদ্রতা বজায় থাকবে। শীতের দিনে পর্যাপ্ত পানি ও অন্যান্য তরল পান করা একান্ত জরুরি। পানির অভাবজনিত রুক্ষতা কিন্তু কোনো ময়েশ্চরাইজারেই দূর হবে না। তাছাড়া শরীরে জমে থাকা যাবতীয় টক্সিন বের করে দিতেও পানি আপনার প্রধান সহায় হতে পারে।

৭. সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। সপ্তাহে অন্তত তিনবার শ্যাম্পু করুন। প্রতিদিন গোসল করুন। এ ক্ষেত্রে মাথায় সর্ষের তেল না দেওয়াই ভাল।
৮. ছোটদের অলিভ তেল মালিশ করা যেতেই পারে। তবে সর্ষের তেল মাখিয়ে রোদে ফেলে রাখার যে রীতি প্রচলিত রয়েছে, তা ত্যাগ করুন আজই।
৯. সুতির পোশাক ব্যবহার করুন, উলের পোশাক সরাসরি না ব্যবহার করাই ভাল। হালকা সুতির জামার ওপর উলের পোশাক ব্যবহার করা উচিত।
১০. ফল, ভিটামিন সমৃদ্ধ শাকসবজি খান। খুব বেশি চিনি, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, অ্যালকোহল, দুধ, লাল মাংস থেকে দূরে থাকতে পারলে ভালো। এগুলি শরীরের উত্তাপ বাড়ায়, তার থেকে আপনার সমস্যা আরও বেড়ে যাবে।
১১। সকাল ১০টার মধ্যে গায়ে অন্তত আধ ঘণ্টার জন্য রোদ লাগানো জরুরি! ভিটামিন ডি স্তরে কোনো ঘাটতি না থাকলে ত্বক ভালো থাকবে।

শরীরে চুলকানি নিয়ে যে ১০টি তথ্য আপনাকে বিস্মিত করবে


. আপনি দিনে প্রায় ৯৭ বার সেখানে চুলকানগবেষণা বলছে, আমরা দিনে কমবেশি ১০০ বার চুলকাই। কখনো কখনো কোনো পশু বা বৃক্ষ-লতার সংস্পর্শে শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়।
এর কারণ এগুলো থেকে নিঃসরিত বিষ চামড়ায় লেগে হিস্টামিন নির্গত হয়। সাথে সাথে স্নায়ুকোষ তার ফাইবারের মাধ্যমে মস্তিস্কে চুলকানির বার্তা পাঠায়।
২. পশু বা গাছের সংস্পর্শে চুলকানি

৩. চুলকানির নিজস্ব স্নায়ু নেটওয়ার্ক কিছুদিন আগ পর্যন্ত মানুষের ধারণা ছিল, একই পথ দিয়ে চুলকানি এবং ব্যথার সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌছায়। কিন্তু ১৯৯৭ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় চুলকানির স্নায়ুর ফাইবার পৃথক।

৪. চুলকানির সিগন্যালের গতি মন্থরএকেক স্নায়ু ফাইবারের একেক গতি : স্পর্শের সিগন্যালের গতি ঘণ্টায় ২০০ মাইল। দ্রুত ব্যথা (যখন আপনি অসাবধানে গরম হাড়িতে হাত দেন) ৮০ মাইল বেগে চলে। কিন্তু চুলকানির গতি ঘণ্টায় দুই মাইল- হাঁটার গতির চেয়ে মন্থর।

৫. চুলকানি সংক্রামিত হয়ইঁদুররা চুলকাচ্ছে -এমন একটি ভিডিও আরেক দল ইঁদুরকে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দেখেই ঐ ইঁদুররা চুলকাতে শুরু করেছিল।

৬. সুপ্রাকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াস নামে মস্তিস্কের ক্ষুদ্র একটি অংশ চুলকানির সংক্রমণের জন্য দায়ী:

বিজ্ঞানীদের এখনো কোনো ধারনা নেই যে কীভাবে মস্তিষ্ক একজনের চুলকানি দেখে আরেকজনকে চুলকাতে উৎসাহিত করে।

৭. চুলকিয়ে চামড়া রক্ষা করা যায়কীট-পতঙ্গ বা বিষাক্ত লতাগুল্মের স্পর্শে প্রতিক্রিয়া হলে চুলকিয়ে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। চুলকানোর সময় আপনার রক্তের শিরা প্রসারিত হয়। ফলে নিঃসরিত হয় শ্বেত কনিকা যা বিষের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।

৮. মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের নিঃসরণচুলকালে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসরিত হয়। ফলে পরিতৃপ্তির অনুভূতি হয়। বোঝাই যায়, কেন চুলকানির থামানো এত কঠিন।

৯. চুলকানোর সবচেয়ে উত্তম জায়গা গোড়ালি২০১২ সালে ব্রিটেনে এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, গোড়ালিতে চুলকানির ঝোঁক সবচেয়ে বেশি এবং সেখানে চুলকালে তৃপ্তিও পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। গোড়ালি চুলকিয়ে দেখুন একবার।

১০. যত চুলকাবেন, ততই চুলকানি তৈরি হবেচামড়ায় চুলকানোর সময় বেশি বেশি হিস্টামিন নিঃসরিত হয়। ফলে আরো চুলকাতে ইচ্ছা করে। এই চক্র সম্পর্কে সাবধান থাকুন। কারণ বেশি চুলকালে চামড়ায় ক্ষত তৈরি হয়, জীবাণুর সংক্রমণও হতে পারে।

-মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

Monday, December 9, 2019

ঐতিহাসিক নিদর্শন সুতানাল দীঘি, শেরপুর


অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশের চির সবুজ প্রকৃতি সর্বদা আর্কষণ করে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের। দেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পাহাড়-নদী, খাল-বিল সবুজ অরণ্যঘেরা প্রকৃতি। তেমনি একটি স্থান শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্যতম ঐতিহাসিক দীঘি কমলা রাণীর দীঘি বা সুতানাল দিঘি বা বিরহীনি দীঘি। তবে প্রাচীন কালের দীঘিটি এলাকায় সুতানাল দীঘি নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।

বিশাল দীঘির নামকরণে রয়েছে চমকপ্রদ প্রাচীন কাহিনী। ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত দীঘিটি। দীঘিটি কে কখন কোন উদ্দেশ্যে খনন করেছিলেন তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি আজো। তবে অনেকেই বলেন, মোঘল আমলের শেষের দিকে গ্রামে কোনো এক সামন্ত রাজার বাড়ি ছিল। আবার কেউ বলেন, এখানে একটি বৌদ্ধ-বিহার ছিল। অনেকেই বলেন খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মধ্যমকুড়া গ্রামে সশাল নামে এক গারো রাজা রাজত্ব করতেন। তাঁর আমলেই এই দীঘি খনন করা হয়।

কথিত আছে, রাণী বিহরণী সামন্ত রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি কী আমাকে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে কিছু দিতে চাও? তাহলে এমন কিছু দাও যা যুগ-যুগ ধরে মানুষ আমাকে মনে রাখবে। তখন রাজবংশী সামন্ত রাজা রাণীকে খুশি করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন। চরকীর সাহায্যে অবিরাম একদিন একরাত সুতা কাটা হবে। দৈর্ঘ্যে যে পরিমান সুতা হবে। সে পরিমান সুতার সমান লম্বা এবং প্রশস্ত একটি দীঘি খনন করা হবে। ওই দীঘির জল জনগণ ব্যাবহার করবে আর তোমাকে স্বরণ করে রাখবে।

তাঁর আমলেই এই দীঘি খনন করা হয়।দীঘিমধ্যে ছোট্ট ভূ-খন্ডের উপর একটি সুন্দর ঘর ছিল সেখানে রাজা রাত্রি যাপন করতেন। ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী চতুর্দিকে টহল দিত। কালক্রমে ভূ-খন্ডটি ধ্বসে গেছে। রাজার শেষ বংশধর ছিলেন তাঁর রাণী বিরহীনি।

দীর্ঘদিন দীঘিটি পরিত্যক্ত থাকায় জলের ওপর শৈবাল জমে গজিয়ে উঠে ঘাস। যার উপর দিয়ে গরু অবাধে ঘাস খেতে পারত। ১৯৭২ সালে প্রথম দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৮৩ সালে দীঘিটি কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে সুতানাল দীঘিপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি। ১৯৮৪ সালে সমিতিটি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়। সমিতির সব সদস্যরা দীঘির পাড়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। দীঘিটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর অক্টোবর মাসে এখানে সৌখিন মৎস্য শিকারীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সারাদেশ থেকে আসা মৎস্য শিকারীরা সমিতির দেয়া টিকিটের মাধ্যমে মাছ শিকার করে থাকেন। দীঘির মাছ খুব সুস্বাদু।

কিভাবে যাবেন:-
সড়ক পথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়। শেরপুর থেকে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায় সিএনজি করে, অথবা নকলা নেমে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায় নালিতাবাড়ী আড়াইআনী বাজার হতে সুতিয়ারপাড় বাজার হয়ে শালমারা রাস্তায় যাওয়া যায়। টেম্পু, অটোরিক্সা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।

 সংকলনঃ জনাব মোঃ নাজিমুল হাসান খান
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
তরুণ উন্নয়ন সংঘ, বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...