মুঘল আমলে স্থাপিত এই মসজিদটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঘাঘড়া খান বাড়ি জামে মসজিদ মুঘল আমলে নির্মিত হয়। মসজিদের দরজায় কষ্টি
পাথরে খোদাই করা আরবি ভাষায় নির্মাণকাল দেওয়া আছে হিজরী ১০২৮ সাল বা
ইংরেজি ১৬০৮ সাল।
মসজিদের গাঁয়ের নিদর্শন থেকে ধারণা করা হয় মসজিদটি
বক্সার বিদ্রোহী হিরঙ্গী খানের সময়কালে নির্মাণ করা হয়েছিল। আজিমোল্লাহ
খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে অনুমান করা হয়। মসজিদটির ব্যাপারে কথিত আছে ‘পালানো খা’ ও জববার খা দুই সহোদর কোনো এক রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। পরাজিত হয়ে ভ্রাতৃদ্বয় এই অরণ্যে আশ্রয় নেন এবং সেখানে এই মসজিদ টি স্থাপন করেন। আরও জনশ্রুতি রয়েছে যে নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ের পর তাঁর সৈন্যদের অনেকেই
বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যান। এমনি একজন পলাতক যোদ্ধা হলেন আজিমোল্লাহ খান,
যিনি পালিয়ে আসেন ঝিনাইগাতীর ঘাগড়া লস্করপাড়া গ্রামে। এখানেই তিনি স্থায়ী
হন এবং নির্মান করেন এই ‘খান বাড়ী জামে মসজিদ’। পালিয়ে আসার জন্য
আজিমোল্লাহ খান এখানে ‘পলায়ন খা’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
মসজিদটির বিশেষত হল, এর ইটগুলো চারকোণা টালির মত। আজ থেকে ছয়/সাতশত বছর পূর্বে এই ইটগুলির ব্যবহার ছিল। আস্তরণ বা পলেস্তার ঝিনুক চূর্ণ অথবা ঝিনুকের লালার সাথে সুড়কি, পাট’ বা তন্তুজাতীয় আঁশ ব্যবহার করেছে। এক গমবুজ বিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণ কৌশল গ্রীক ও কোরিন থিয়ান রীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। প্রবেশ পথের উপর রয়েছে আরবি ভাষায় নির্মাণকাল ও পরিচয় শিলা লিপি দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, সেই যুগেও স্থপতি এ অঞ্চলে ছিল। মসজিদটি পুরাকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন। যা দেখে যে কোন পর্যটক আকৃষ্ট হবেন, বিমোহিত হবেন। মসজিদটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে মসজিদটির রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অদিদপ্তর।
মসজিদের ভিতরে দুটি সুদৃঢ় খিলান রয়েছে। মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট এবং এর
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩০ ফুট। মাঝখানে গম্বুজে ছোটবড় ১০টি মিনার রয়েছে।
পূর্বদিকে একটি দরজা রয়েছে। ভিতরে মেহরাব ও দেয়ালে বিভিন্ন রঙের ও
কারুকার্য করা ফুল ও ফুলদানি আঁকা আছে। মসজিদের দেয়ালের গাথুনী চুন ও
সুরকি দিয়ে গাথা যার প্রস্ত ৪ ফুট। মসজিদের মোট জমি ৫৮ শতাংশ যা তৎকালীন
খান বাড়ির লোকজন ও গ্রামের অনেকে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দিয়ে গেছে।
মসজিদের মূল ভবন ও বারান্দা ১৭ শতাংশ এবং বাকি ৪১ শতাংশ জায়গায় রয়েছে
কবরস্থান।
মসজিদের ভেতর ইমাম ছাড়া তিনটি কাতারে ১২ জন করে একসঙ্গে ৩৬ জন মুসল্লি
নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে আরও প্রায় অর্ধশত মুসল্লি
নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের বর্তমান ইমাম জুম্মাসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান।
কিভাবে যাবেন:-
লস্কর খানবাড়ী মসজিদটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের
ঘাগড়া লস্কর গ্রামে। সড়ক পথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব ২০৩ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়। শেরপুর জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার।