Monday, November 23, 2020

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া খান মসজিদ

 শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া খান মসজিদ
মুঘল আমলে স্থাপিত এই মসজিদটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঘাঘড়া খান বাড়ি জামে মসজিদ মুঘল আমলে নির্মিত হয়। মসজিদের দরজায় কষ্টি পাথরে খোদাই করা আরবি ভাষায় নির্মাণকাল দেওয়া আছে হিজরী ১০২৮ সাল বা ইংরেজি ১৬০৮ সাল।
 
 মসজিদের গাঁয়ের নিদর্শন থেকে ধারণা করা হয় মসজিদটি বক্সার বিদ্রোহী হিরঙ্গী খানের সময়কালে নির্মাণ করা হয়েছিল। আজিমোল্লাহ খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে অনুমান করা হয়। মসজিদটির ব্যাপারে কথিত আছে ‘পালানো খা’ ও জববার খা দুই সহোদর কোনো এক রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। পরাজিত হয়ে ভ্রাতৃদ্বয় এই অরণ্যে আশ্রয় নেন এবং সেখানে এই মসজিদ টি স্থাপন করেন। আরও জনশ্রুতি রয়েছে যে নবাব সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ের পর তাঁর সৈন্যদের অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে যান। এমনি একজন পলাতক যোদ্ধা হলেন আজিমোল্লাহ খান, যিনি পালিয়ে আসেন ঝিনাইগাতীর ঘাগড়া লস্করপাড়া গ্রামে। এখানেই তিনি স্থায়ী হন এবং নির্মান করেন এই ‘খান বাড়ী জামে মসজিদ’। পালিয়ে আসার জন্য আজিমোল্লাহ খান এখানে ‘পলায়ন খা’ নামেও পরিচিত ছিলেন।
 
মসজিদটির বিশেষত হল, এর ইটগুলো চারকোণা টালির মত। আজ থেকে ছয়/সাতশত বছর পূর্বে এই ইটগুলির ব্যবহার ছিল। আস্তরণ বা পলেস্তার ঝিনুক চূর্ণ অথবা ঝিনুকের লালার সাথে সুড়কি, পাট’ বা তন্তুজাতীয় আঁশ ব্যবহার করেছে। এক গমবুজ বিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণ কৌশল গ্রীক ও কোরিন থিয়ান রীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। প্রবেশ পথের উপর রয়েছে আরবি ভাষায় নির্মাণকাল ও পরিচয় শিলা লিপি দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, সেই যুগেও স্থপতি এ অঞ্চলে ছিল। মসজিদটি পুরাকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন। যা দেখে যে কোন পর্যটক আকৃষ্ট হবেন, বিমোহিত হবেন। মসজিদটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে মসজিদটির রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অদিদপ্তর।
 
মসজিদের ভিতরে দুটি সুদৃঢ় খিলান রয়েছে। মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট এবং এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩০ ফুট। মাঝখানে গম্বুজে ছোটবড় ১০টি মিনার রয়েছে। পূর্বদিকে একটি দরজা রয়েছে। ভিতরে মেহরাব ও দেয়ালে বিভিন্ন রঙের ও কারুকার্য করা ফুল ও ফুলদানি আঁকা আছে। মসজিদের দেয়ালের গাথুনী চুন ও সুরকি দিয়ে গাথা যার প্রস্ত ৪ ফুট। মসজিদের মোট জমি ৫৮ শতাংশ যা তৎকালীন খান বাড়ির লোকজন ও গ্রামের অনেকে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দিয়ে গেছে। মসজিদের মূল ভবন ও বারান্দা ১৭ শতাংশ এবং বাকি ৪১ শতাংশ জায়গায় রয়েছে কবরস্থান।
 
মসজিদের ভেতর ইমাম ছাড়া তিনটি কাতারে ১২ জন করে একসঙ্গে ৩৬ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে আরও প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের বর্তমান ইমাম জুম্মাসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান।

কিভাবে যাবেন:-

লস্কর খানবাড়ী মসজিদটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে।  সড়ক পথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব ২০৩ কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়। শেরপুর জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার।

Saturday, November 14, 2020

মাইসাহেবা জামে মসজিদ, শেরপুর।

শেরপুর শহরের একটি পুরনো ঐতিহ্য হল "মাইসাহেবা জামে মসজিদ"। শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে শেরপুর সরকারি কলেজর দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত। আনুমানিক ২৫০ বৎসর পূর্বে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। জেলার প্রাচীন নিদর্শনের এটি একটি। বক্রাকারে খিলানের ব্যবহার এবং সুউচ্চ মীনার ২টি সত্যি দৃষ্টিনন্দিত। স্থাপত্য কলার আধুনিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এই মসজিদটিতে। এটি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। শেরপুর শহরের প্রবেশের সময় এর মিনার দুটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। শেরপুর শহরে প্রবেশের পর যে কারো এই মসজিদটি দৃষ্টি কাড়বে।

শেরপুরের তিন আনি জমিদার মুক্তাগাছা জমিদার কে দাওয়াত করেছিলেন। দাওয়াতের উত্তরে মুক্তাগাছার জমিদার বিশ্রাম করার জন্য শেরপুরে একটি জায়গা চান। তখন মসজিদের এই স্থানে জমিদারের খাজনা আদায়ের ঘরের পাশে একটি ঘর ছিল, শেরপুরের জমিদার এই জায়গা মুক্তাগাছার জমিদার কে দেবে
বলে মনস্থির করেন এবং হাতি দিয়ে ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার আদেশ করেন। কিন্তু হাতি যখনি ঘরটির কাছে আসে তখনই সালাম দিয়ে বসে যায়। খবর পেয়ে তিন আনি জমিদার এসে দেখি ঘরের ভিতর একজন মহিলা সৃষ্টিকর্তার উপাসনায় মগ্ন জমিদার বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চেয়ে চলে আসেন। সেই ধর্মপ্রান মহিলার নামই মাইসাহেবা। তার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে যে মসজিদটি নির্মাণ করেন তার নাম দেন "মাইসাহেবা মসজিদ"।

বহুতল বিশিষ্ট এই মসজিদে একসাথে প্রায় ৯০০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে। প্রতি শুক্রবারে শহরের বাহির থেকেও অনেক মুসল্লিগণ নামাজ আদায় করতে আসে এ মসজিদে। বিশাল এই মসজিদের সামনের অংশে অনেক জায়গা রয়েছে। এখানে প্রতি বছর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। 



সংকলন- মোঃ নাজিমুল হাসান খান।

পানিহাটা-তারানি পাহাড়, শেরপুর।

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। এই দেশের চির সবুজ প্রকৃতি সর্বদা আর্কষণ করে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের। দেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পাহাড়-নদী, খাল-বিল ও সবুজ অরণ্যঘেরা প্রকৃতি। তেমনি একটি স্থান শেরপুরের পানিহাটা-তাড়ানি পাহাড়। 

পর্যটনের জন্য সম্ভাবনাময় এই স্থানটির অবস্থান শেরপুর জেলায়। শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত পানিহাটা-তারানি পাহাড়। মূলত পানিহাটা গ্রামের একটি অংশে রয়েছে তারানি গ্রামের পাহাড়। আর এ দুয়ে মিলেই পর্যটকদের কাছে এ অঞ্চলটির পরিচিতি গড়ে উঠেছে পানিহাটা-তারানি পাহাড় নামে।

প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার অপরূপা পানিহাটা-তারানি পাহাড়। মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি দৃশ্য যে কোন প্রকৃতি প্রেমীর মনকে কাছে টানবে। আর তাই পানিহাটা-তারানি পাহাড়ি এলাকা হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। পানিহাটা নামের স্থানটির একটা অংশে রয়েছে তারানি গ্রামের পাহাড়। তাই দর্শণার্থীদের জন্য পানিহাটা-তারানি দুটো মিলেই গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র । একঘেয়ে জীবন, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মনকে প্রফুল্ল করতে শহর ছেড়ে ঘুরে আসুন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউপির পানিহাটা-তারানি পাহাড় এলাকা।
 
এখানে দেখতে পাবেন উত্তরে ভারতের তুরা পাহাড়কে আবছা আবরণে ঢেকে আছে মেঘ-কুয়াশা। দূরের টিলাগুলো মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে যেন। তুরার অববাহিকা থেকে সামনে সোজা এসে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই। নদীর একপাশে শত ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে জড়ানো পাহাড়। নদীর টলটলে পানির নিচে নুড়ি পাথরগুলো ঝিকিমিকি করছে। সামনের একশ গজ দূরে ভারত অংশে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে মাঝেমধ্যেই হুসহাস করে ছুটে চলছে মালবাহী ট্রাকগুলো। চতুর্দিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের সাড়ি। 
 
কিভাবে যাওয়া যায়: 

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার এবং শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এ স্থানটি। তবে ঢাকা থেকে শেরপুর জেলা শহরে না এসেই নকলা উপজেলা শহর থেকেই নালিতাবাড়ী যাওয়ার সহজ ও কম দূরত্বের রাস্তা রয়েছে। এরপর নালিতাবাড়ী শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় হয়ে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের কাছাকাছি গিয়ে পূর্ব দিকটায় মোড় নিয়ে ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হয়। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গেলে চায়না মোড়। এ মোড়ে এসে আবারও গতিপথ বদলে যেতে হয় উত্তরে। উত্তরের এ রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির মূল পয়েন্ট। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিকশা, সিএনজি অটোরিশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় নালিতাবাড়ী শহর থেকে মাত্র ৩৫-৪৫ মিনিটের ব্যবধানে এবং অল্প খরচের মধ্যেই। এতে মোটরসাইকেল ভাড়া আসা-যাওয়ায় প্রায় ১ শ ৫০ টাকা। 
 
 
 
 
 
সংকলন-  মোঃ নাজিমুল হাসান খান।

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...