মানুষের জীবনের এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা হচ্ছে- ঋণ আদান-প্রদান। প্রয়োজনের
সময় মানুষ ঋণ নেয়।
ঋণের আদান-প্রদানে
ঋণগ্রহীতা ঋণের টাকা নিয়ে যেমন উপকৃত হয় এবং তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে, তেমনি ঋণদাতাও এর মধ্য দিয়ে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে আসে।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে
একদিকে ঋণ প্রদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে, অপরদিকে ঋণ
পরিশোধের বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করবে
তাদের জন্যে হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হয়েছে।
ঋণ যথারীতি পরিশোধের
বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ প্রদান করে ঋণদাতা গ্রহীতাকে উপকার ও অনুগ্রহ করে থাকে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ কোনো অনুগ্রহ
নয়,
বরং ঋণগ্রহীতার ওপর এক অবধারিত দায়িত্ব। ঋণগ্রহীতার ওপর এটি ঋণদাতার অধিকার। এমনকি যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ
করার পূর্বে মারা যায়, তাহলে কাফন-দাফনের
পর প্রথমেই তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধের পর যদি অতিরিক্ত কিছু থাকে, তাহলেই কেবল তার
ওয়ারিশদের মাঝে তা বণ্টন করা হবে এবং
তাতে তার অসিয়ত কার্যকর হবে।
ঋণ পরিশোধের বিষয়টি
একদিকে যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি হাদিস শরিফে এর ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। এতে প্রকারান্তরে যথারীতি ঋণ পরিশোধের
প্রতি উৎসাহিতও করা হয়েছে। সাহাবী
হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করে দেওয়ার নিয়তে কারও
নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহতায়ালা তার
পক্ষ থেকে তা আদায় করে দেন। ’ -সহিহ বোখারি: ২৩৮৭
যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করে
দেওয়া কেবল পাওনা আদায় নয়, বরং এটা ওয়াদা রক্ষা করার অন্তর্ভুক্ত। সময়মতো যেন ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায় এজন্যে হাদিসে
আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা
হয়েছে। ইমাম বোখারি (রহ.) বর্ণনা করেছেন, হজরত আবু যর (রা.) বলেছেন, আমি একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। একপর্যায়ে উহুদ পাহাড় তার
দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বললেন, ‘আমি চাই না- উহুদ পাহাড় আমার জন্যে স্বর্ণে পরিণত
করে দেওয়া হলেও এর একটি দিনার আমার নিকট
তিনদিনের বেশি সময় থাকুক; হ্যাঁ, যদি কোনো দিনার আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্যে রেখে দিই সেটা ভিন্ন। -সহিহ
বোখারি: ২৩৮৮
সময়মতো প্রতিশ্রুতি
রক্ষা করে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ঋণগ্রহীতা যেন এ দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারে
সেজন্যে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)
সাহাবাদের দোয়াও শিখিয়েছেন। দোয়াটি হলো-
দোয়া: اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনী বিহালালিকা অান হারামিক, ওয়া আগনিনী বিফাজলিকা
আম্মান সিওয়াক।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল বিষয়ের মাধ্যমে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার
দয়া ও করুণা দিয়ে অন্যদের থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী
করে দিন। -জামে তিরমিজি: ৩৫৬৩
অনেকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে থাকে। কাজটি সুস্পষ্ট অন্যায়। ঋণগ্রহীতার মনে রাখা
উচিত- ঋণদাতা তার ওপর অনুগ্রহ করেছে, এ অনুগ্রহের পরিবর্তে তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করাই কর্তব্য। সময়মতো যদি তার ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে, তাহলে সে সৌজন্য রক্ষা করে ঋণদাতাকে তা জানাতে পারে, তার কাছ থেকে আরও কয়েকদিন সময় চেয়ে নিতে পারে। কিন্তু সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ যথাসময়ে
আদায়ে টালবাহানা করা- হাদিসে একে সরাসরি জুলুম বলা হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা
(রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সচ্ছল ব্যক্তির (ঋণ পরিশোধে) টালবাহানা করা অন্যায়।
-সহিহ বোখারি: ২৪০০
সময়মতো ঋণ পরিশোধ না
করলে পাওনাদার অনেক সময় কটুকথাও বলে। ইসলামের
শিক্ষা হলো- পাওনা টাকার জন্যে তাগাদা করার সময় ঋণদাতা যেন সহজ ও কোমল আচরণ করে, কোনো কটুবাক্য ব্যবহার না করে। কিন্তু এরপরও যদি সে
কটুকথা বলে,
অসুন্দর আচরণ করে, তাহলে ঋণগ্রহীতার উচিত তার সঙ্গে বাদানুবাদে কিংবা ঝগড়া-তর্কে জড়িয়ে না পড়া।
বোখারি শরিফে আছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কিছু ঋণ নিয়েছিলেন।
সে এসে তার সঙ্গে কঠোর ভাষায় কথা বলতে লাগল। তা দেখে সাহাবায়ে কেরাম তাকে মারতে উদ্যত হচ্ছিলেন। কিন্তু হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)
তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের একটু কথা
বলার অধিকার রয়েছে। -সহিহ বোখারি: ২৪০১
ঋণপরিশোধের সময়
ঋণগ্রহীতা ইচ্ছা করলে ঋণদাতার অনুগ্রহের বদলাস্বরূপ তাকে কিছু টাকা বাড়িয়েও দিতে পারে কিংবা যে মানের সম্পদ ঋণ নিয়েছিল তাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট মানের জিনিস ফেরত দিতে পারে। বাড়িয়ে দেয়ার যদি স্পষ্ট
কিংবা অস্পষ্ট কোনো পূর্ব কথা না থাকে, তাহলে এটা নিষিদ্ধ
সুদের অন্তর্ভুক্তও হবে না। অনুগ্রহের
বিনিময় তো অনুগ্রহ দিয়েই হতে পারে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনালেখ্য থেকেও আমরা এ অনুগ্রহের শিক্ষা পাই।
সাহাবি হজরত জাবের
(রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার কাছ থেকে একবার ঋণ নিয়েছিলেন। পরে যখন তিনি তা
আমাকে পরিশোধ করলেন, তখন আমার পাওনার
চেয়েও বাড়িয়ে দিলেন। -সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৪৯
পাওনা পরিশোধকালে
পাওনাদারের কৃতজ্ঞতা জানানো এবং তার জন্যে কল্যাণের দোয়া করা ইসলামের এক অনন্য
শিক্ষা।
হজরত রাসূলুল্লাহ
(সা.) একবার সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি রবিয়া (রা.)-এর থেকে চার হাজার দিরহাম ঋণ করেছিলেন। যখন তা
পরিশোধ করলেন, তখন তিনি
তার জন্য এ দোয়া করলেন, আল্লাহতায়ালা তোমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। -সুনানে নাসায়ি: ৪৬৮৩
ঋণ সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর বিশেষ নির্দেশনা
আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে মানুষকে উত্তম
ঋণ প্রদানের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন।
উত্তম ঋণের বহুগুণ বিনিময় ঘোষণা করেছেন। যাতে মানুষ পরস্পরের বিপদে এগিয়ে আসে।
করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে
আল্লাহ বলেন-
‘কে
সেই ব্যক্তি? যে
আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে, ফলে
আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ
বৃদ্ধি করে দেবেন। আর আল্লাহই রিজিক সংকুচিত করেন এবং বৃদ্ধি করেন
আর তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা
বাকারা : আয়াত ২৪৫)
করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ আদান-প্রদানে
রয়েছে অনেক ফজিলত। এ কথা যেমন ঠিক আবার ঋণ নিয়ে যদি তা পরিশোধ
করা না হয় সে সম্পর্কেও রয়েছে কঠিন সতর্কতা। এ সম্পর্কেও কুরআন হাদিসে
রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা-
- ঋণ গ্রহণ সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে
মুমিনগণ! তোমরা যখন পরস্পরে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের আদান-প্রদান কর, তখন
তা লিখে নাও।’ (সুরা
বাকারা : আয়াত ২৮২)
- আবার যদি কেউ ঋণ গ্রহণ করার পর তা দিতে অপারগ হয় বা কষ্টে পতিত হয়, সে সময়
ঋণদাতার করণীয়ও আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,
‘আর
ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহলে
তাকে স্বচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহলে
সেটা তোমাদের জন্য আরও উত্তম, যদি
তোমরা তা জানতে।’ (সুরা
বাকারা : আয়াত
২৮০)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মানুষকে তাদের ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে
অনেক সতর্ক করেছেন। ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব সম্পর্কে রয়েছে প্রিয়নবির অসংখ্য হাদিস। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
- হজরত
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন ‘কোনো
ব্যক্তি ঋণ রেখে মারা গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই ব্যক্তির জানাযা পড়াতেন না বরং অন্যকে পড়াতে
নির্দেশ দিতেন।
(দারাকুতনি, তারগিব-তারহিব)
- বুখারির
এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে
ব্যক্তি কারো কাছে কর্জ নেয় এবং তা আদায় করার নিয়ত রাখে না, আল্লাহ
তাকে ধ্বংস করে দেবেন।’
- হজরত
ছোহায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু
বর্ণনা করেন, ‘যে
ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করেছে কিন্তু তা পরিশোধ করার ইচ্ছা
পোষণ করেনি সে ব্যক্তি চোর সাব্যস্ত হয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।’ (ইবনে
মাজাহ, তারগিব)
- হজরত
বারা ইবনে আজে রাদিয়াল্লাহু
আনহু বর্ণনা করেন, ‘ঋণী
ব্যক্তি ঋণের কারণে নিঃসঙ্গ বন্দী জীবন-যাপন
করবে এবং তা অশান্তি থেকে মুক্তি পাবার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ
করতে থাকবে। (তাবারানি, তারগিব-তারহিব)
- হজরত
মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর
খাদেম হজরত আবুল কাসেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে
ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ
করে কিন্তু সে ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছা পোষণ করে না, পরিশোধের
জন্য তৎপর
হয় না; তার
নেকিসমূহ ঋণদাতার নেকির সঙ্গে মিশানো হবে, (ঋণগ্রস্ত
ব্যক্তির) নেকি না থাকলে ঋণদাতার গোনাহসমূহ ঋণী ব্যক্তির ওপর চাপানো
হবে।’ (বাইহাকি, তারগিব, তারহিব)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য ঋণ পরিশোধ করা
অত্যন্ত জরুরি। এ কারণেই কোনো
ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি সে ঋণগ্রস্ত থাকে তবে তার সম্পদ থেকে প্রথমে ঋণ পরিশোধ করা জরুরি অতঃপর বাকি সম্পদ অংশীদারদের জন্য
প্রযোজ্য।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ইসলামের জন্য
শাহাদাতকারীও হয় তবুও তাকে ঋণ পরিশোধ করতে
হবে। এ সম্পর্কে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন-
- হজরত
কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু
বর্ণনা করেন, একবার
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম
লোকদের সমাবেশে দাঁড়ালেন এবং এই আলোচনা করলেন যে, আল্লাহর
দ্বীনের জন্য জেহাদ
এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান সর্বোত্তম আমল বটে। এক বক্তি জিজ্হাসা করলেন, আমি
আল্লাহর দ্বীনের জন্য জেহাদে যদি নিহত হই, তবে
আল্লাহ আমার জীবনের সব গোনাহ
ক্ষমা করে দেবেন কি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম (এবার সংশোধনের সঙ্গে উত্তর দিলেন) বললেন, ‘হ্যাঁ’, যদি
তুমি রণাঙ্গনে
স্থিতিশীল থাক, সাওয়াব
লাভের নিয়ত করে থাক, সম্মুখ
দিকে থাক, পলায়নের
দিকে না থাক; কিন্তু
ঋণ ব্যতিত। (ইসলামের জন্য শহিদ হওয়ার দ্বারা
ঋণ মাফ হবে না।) এই মাত্র জিবরিল আমাকে একথা বললেন।’ (মুসলিম)
- তবে
অন্য বর্ণনা হজরত আবু উমামা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ
তাআলা নৌযুদ্ধে শহিদদের সব গোনাহ এবং ঋণও মাফ
করেন।’ (ইবনে
মাজাহ)
সুতরাং কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত হলে সে ঋণ আদায়ে যথাসম্ভব চেষ্টা করা উচিত। ঋণ আদায়ের সামর্থ না থাকলেও ঋণ আদায়ের প্রবল ইচ্ছা পোষণ ও চেষ্টা করা জরুরি।
ঋণের
মাধ্যমে লাভের উদাহরণ-
(ক) কাউকে এক
হাজার টাকা ধার দেয়া এবং ফেরত নেয়ার সময় বেশি নেয়া। এটা স্পষ্ট সুদ।
(খ) কোনো
দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ঋণ দেয়া এই উদ্দেশ্যে বা
এই শর্তে যে ঋণ গ্রহীতা ঋণ দাতার কিংবা তার পরিবারের
কাউকে চাকরি দেবে বা দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
(গ) কাউকে ঋণ
দেয়া এই উদ্দেশ্যে যে, সে তাকে ঘর বা দোকান ভাড়া দেবে
কিংবা এ ধরণের অন্য কিছু, যা সমাজের অনেকাংশে প্রচলিত।
ইসলামে উত্তম ঋণ পরিশোধ ব্যবস্থা এবং বর্তমান ব্যাংকিং প্রথা, একটি সংশয় নিরসন: ইসলাম ঋণ দেয়াকে
যেমন লোকের সাহায্য তথা তাদের কষ্ট দূরীকরণ
হিসেবে স্বীকার করে, তেমন ঋণ পরিশোধে উত্তম দৃষ্টান্ত পেশ করে। তাই ঋণ গ্রহীতা ঋণ ফেরত দেয়া সময় বেশি বা উত্তম ফেরত দিতে পারে, যাকে শরীয়াতের পরিভাষায় ‘হুসনুল্ কাযা’ বা উত্তম পরিশোধ বলা হয়।
আবূ রাফি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা নবী (সা.) এক ব্যক্তি হতে একটি উষ্ট্রী
ধার নেন। তার পর সাদাক্বার উট আসলে আবূ রাফি-কে আদেশ
দেয়া হয়, সে যেন সেই ব্যক্তির উট ফেরত দেয়। আবূ রাফি (রা.) ফিরে এসে বলে, (সেই সমগুণের উট নেই বরং তার থেকে
উত্তম) রুবায়ী মুখতার (এমন পুরুষ উট যা
ছয় বছর বয়স অতিক্রম করে সপ্তম বছরে প্রবেশ করেছে এমন) উট আছে। নবী(সা.) বলেন, তাই দিয়ে দাও; কারণ ভালো মানুষ তারা যারা উত্তম পরিশোধকারী।
(সহিহ মুসলিম-অধ্যায়: বয়ূ, হা: ৪১০৮, মা: শা: ,হা: ১১৮/১৬০০)।
অনেকে ইসলামের এই সুন্দর বিধান না বুঝতে পেরে, কিংবা না বুঝার ভান করে, কিংবা
অপরিপক্ক জ্ঞানের কারণে কিংবা অন্তরে কু-প্রবৃত্তির
রোগ থাকার কারণে, বিষয়টিকে বর্তমান ব্যাংকিং প্রথায় অতিরিক্ত প্রদান করা ও অতিরিক্ত গ্রহণ করা বৈধ বলে ফাতাওয়া দিয়েছে। তাদের মন্তব্য, নবী (সা.) যেমন ঋণ ফেরত দেয়ার সময় বেশি দিলেন এবং ঋণ দাতা বেশি গ্রহণ করলেন, তখন আমরা ব্যাংকে ঋণ ফেরত দেয়ার সময়
যদি বেশি দেই এবং তারা সেটা গ্রহণ করে তো
অবৈধতার কিছু নেই।
উত্তরে বলবো, নবী (সা.)-কে
এর ঋণ ফেরত বেশি দেয়া এবং বর্তমান যুগের ব্যাংকিং
প্রথায় বেশি লেন-দেনের প্রথার মধ্যে বিরাট পার্থক্য
বিদ্যমান।
প্রথমত: নবী (সা.)-কে
ঋণ দাতা ঋণ প্রদানের সময় কোনো শর্ত
দেয়নি যে, ঋন ফেরত কালে বেশি ফেরত দিতে হব। অন্যদিকে বর্তমান ব্যাংক সুক্ষ্ন হিসেবের মাধ্যমে বেশি দেয়ার শতকরা হার নির্ধারণ করে দেয় এবং নির্ধারিত সময়ে তা ফেরত না দিতে পারলে শতকরা হার আরো বৃদ্ধি পায়। আসলে ব্যাংক এই চক্রের মাধ্যমেই অর্থায়ন করে থাকে, আর আমরা বুঝেও বুঝি না।
দ্বিতীয়ত: সমাজে এটা পরিচিত চিল না যে,নবী (সা.)-কে ঋণ দিলে তিনি অতিরিক্ত
ফেরত দেন। বরং তিনি হঠাৎই এই রকম
আদেশ দেন। এই কারণে ইসলামী পণ্ডিতগণের ঐক্যমত রয়েছে যে, যে কোনো যদি বেশি ফেরতের শর্ত থাকে, তাহলে সেটা হারাম।
ঋণ যোগ্য জিনিসাদিঃ
অর্থাৎ কি কি জিনিস
ঋণের অন্তর্ভুক্ত, যা ঋণ হিসাবে আদান-প্রদান করা যেতে
পারে?
এ বিষয়ে
ফুকাহাদের মতভেদ বিদ্যমান। তবে নির্ভরযোগ্য মত হচ্ছে, প্রত্যেক এমন বস্তু যা বিক্রয় করা বৈধ, তা ঋণ দেওয়াও বৈধ।[যাদুল্
মুস্তাক্বনা’, হিজাভী/২১২]
ঋণ প্রদানের ফযীলতঃ
ঋণ প্রদান একটি
নেকির কাজ, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। এর মাধ্যমে লোকের সাহায্য করা হয়, তাদের প্রতি
দয়া করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে
তাদের সমস্যা হ্রাস করা হয় কিংবা সমাধান করা হয়।
নবী (সাঃ) বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুনিয়াবী বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তাআলা তার আখেরাতের বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর কষ্ট সহজ করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতে সহজ
করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্য করেন যতক্ষণে
বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।” [মুসলিম,অধ্যায়ঃ যিকর, দুআ,তাওবাহ ও ইস্তিগফার]
নবী (সাঃ) আরো বলেনঃ ‘‘যে কেউ কোনো মুসলিমকে দুই বার ঋণ দেয়, তা সেই
অনুযায়ী এক বার সাদাকা করার মত।’’ [ইবনু মাজাহ, সূত্র হাসান,ইরওয়াউল গালীল নং১৩৮৯]
ঋণ লেন-দেনে মেয়াদ নির্ধারণঃ
বিষয়টির ব্যাখ্যা
হচ্ছে,
ঋণ দাতা এবং ঋণ গ্রহীতা লেন-দেনের সময় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করতে পারে কি পারে না? সঠিক মত হচ্ছে, মেয়াদ নির্ধারিত করতে পারে এবং
প্রয়োজনে মেয়াদ বৃদ্ধিও করতে পারে। কারণ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধারে
কারবার করবে, তখন তা লিখে রাখবে।” [সূরা বাকারাহ – ২৮২]
অতঃপর মেয়াদ
নির্ধারিত থাকলে ঋণদাতা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ঋণ গ্রহীতার নিকট থেকে ঋণ ফেরত নেওয়ার দাবী করতে পারে না। বরং সে নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বাধ্য। কারণ নবী (সাঃ) বলেনঃ
‘‘মুসলিমগণ শর্ত পূরণে বদ্ধপরিকর।” [আহমদ,আবু দাউদ,তিরমিযী]
ঋণ পরিশোধে বিলম্ব না করাঃ
ঋণ দাতা যখন
মানুষের উপকার্থে ঋণ প্রদান করে, তখন ঋণ গ্রহীতার দ্বীনী ও নৈতিক দায়িত্ব হবে তা যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া। যদি এইরকম না করে টাল-বাহানা শুরু করে, মিথ্যা ওজর পেশ করতে লাগে, তাহলেই আপসে মিল-মুহব্বত ও ভ্রাতৃত্ব
নষ্ট হয়, শত্রুতা বৃদ্ধি পায় এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বাস যোগ্যতা হারায়।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কি হতে
পারে?”
[সূরা আর রাহমান – ৬০]
তিনি অন্যত্রে বলেনঃ
( إن الله يأمركم أن تؤدوا الأمانات إلى أهلها
)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, হকদারদের হক তাদের নিকট পৌঁছে দিতে।” [ সূরা নিসা – ৫৮]
নবী (সাঃ) বলেনঃ
“ধনী ব্যক্তির টাল-বাহানা করা অত্যাচার।” [মুত্তাফাকুন আলাইহ]
তিনি (সাঃ) আরো বলেনঃ
” من فارق الروح الجسد، و هو بريء من ثلاث دخل الجنة: من الكبر، والغلول، والدين” – رواه ابن ماجه
‘‘যে ব্যক্তি
মৃত্যু বরণ করল এমতাবস্থায় যে, সে তিনটি স্বভাব থেকে মুক্ত ছিল, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেঃ অহংকার, গনীমতের
সম্পদ হতে চুরি এবং ঋণ।” [ইবনু মাজাহ, আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেন]
ঋণ পরিশোধের পূর্বে মৃত্যুবরণঃ
ঋণ মানুষের হক-পাওনা, তা পূরণের পূর্বে মৃত্যুবরণ করা মানে মানুষের হক নিজ স্কন্ধে থেকে যাওয়া, যা বড় অপরাধ। সেই কারণে এই প্রকার
ব্যক্তির জানাযার নামায নবী (সাঃ) নিজে পড়েন নি। ইমাম
তিরমিযী হাসান-সহীহ সনদে আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে
বর্ণিত করেন, নবী (সাঃ) এর কাছে একদা এক ব্যক্তির
জানাযা নিয়ে আসা হলে, তিনি (সাঃ)
বলেনঃ ‘‘তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়; কারণ সে ঋণী।’’ [তিরমিযী, অধ্যায়ঃ জানাযা, নং১০৬৯]
এই কারণে ইসলামী
পন্ডিতগণ বলেন, মাইয়্যেতের তারেকাহ (উত্তরাধিকার)
বন্টণের পূর্বে কয়েকটি হক নির্ধারিত, তা পূরণের পরেই তার উত্তরাধিকার বন্টিত হবে। তন্মধ্যে
মাইয়্যেতের উপর অপরের হক সমূহ অন্যতম। সেই হক আল্লাহর হোক, যেমন যাকাত কিংবা মানুষের হক হোক, যেমন ঋণ। [আল্ মুলাখ্খাস আল্ ফিক্হী, ড. ফাউযান/৩৩৪]
অভাবী ঋণীকে অবকাশ প্রদানঃ
সমাজে যেমন কিছু
লোক পাওয়া যায়, যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ঋণ শোধ
করতে ঢিলেমি করে, তেমন
সত্যিকারে এমন লোকও রয়েছে যারা নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। এই রকম ব্যক্তিকে ইসলাম অতিরিক্ত সময় দিতে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
( و إن كان ذو عُسرة فنظرة إلى ميسرة و أن تصدقوا خيرٌ لكم إن كنتم تعلمون)
“যদি ঋণী দরিদ্র
হয়,
তবে স্বচ্ছল অবস্থা আসা পর্যন্ত অবকাশ দিবে আর মাফ করে দেয়া তোমাদের পক্ষে অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে!” [ সূরা বাক্বারাহ – ২৮০]
নবী (সাঃ) বলেনঃ
‘‘যে ব্যক্তি
পছন্দ করে যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামত দিবসের কষ্ট
থেকে নিষ্কিৃতি দিবে, সে যেন অভাবী
ঋনীকে অবকাশ দেয় কিংবা তার ঋণের বোঝা লাঘব করে।” [মুসলিম, অধ্যায়, ক্রয়-বিক্রয়, নং ৪০০০]
এখানে একটি বিষয়
বর্ণনা করা জরূরী মনে করছি, তা হল, ঋণ গ্রহীতা
যদি নির্ধারিত সময়ে ঋণ ফেরত দিতে না পারে, তাহলে তাকে অবকাশ দিতে হবে বিনা লাভের শর্তে। কিন্তু যদি
ঋণ দাতা তার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় এবং এর বিনিময়ে লাভ নেয় তাহলে তা স্পষ্ট সুদ হবে। যেমন কেউ এক বছর পর তার ঋণ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু বছর শেষ হলে সে ফেরত না দিতে পারায় ঋণ দাতার নিকট আরো ৫ মাস সময় বাড়িয়ে দেয়ার আবেদন করলো। অতঃপর ঋণ দাতা তাকে বললোঃ ঠিক আছে মেয়াদ বাড়াবো কিন্তু এর বিনিময়ে তোমাকে ঋণ ফেরতের সময় মূল ধনের বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ সময় বৃদ্ধির বিনিময়ে লাভ গ্রহণ। এটা স্পষ্ট সুদ, যা নবী (সাঃ)
এর যুগে আরবের জনপদে ছিল এবং তা এখনও
বিদ্যমান। [আল্ মুলাখ্খাস আল ফিকহী, ড.ফাউযান
/২৩৭]
ঋণ পরিশোধ না করার উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণঃ
আজ-কাল সমাজে আর এক
প্রকার লোক দেখা যায়, যারা ঋণ নেয় পরিশোধ না করার
উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ আসলে তার অন্তরে থাকে অন্যের
অর্থ কৌশলে আত্মসাত করা। আর ঋণ করাটা হচ্ছে তার
একটি বাহানা মাত্র। এই রকম লোকেরা এক সাথে কয়েকটি হারাম কাজে লিপ্ত হয়।
১ – বাতিল পদ্ধতিতে অন্যের মাল-সম্পদ
ভক্ষণ,
যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। [বাক্বারাহ/১৮৮]
২ – ধোকা তথা প্রতারণা।
৩ – জেনে বুঝে সজ্ঞানে গুনাহ করা।
৪ – মিথ্যা বলা।
নবী (সাঃ) বলেনঃ
من أخذ أموال الناس يريد أداءها أدى الله عنه، و من أخذ يريد إتلافها أتلفه الله – رواه البخاري
অর্থ, ‘‘যে ব্যক্তি
অন্যের মাল পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে নেয়, আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ হতে পরিশোধ করে দেন। (পরিশোধ করতে সাহায্য করেন) আর যে ব্যক্তি তা নষ্ট করার উদ্দেশ্যে নেয়, আল্লাহ তা নষ্ট করে দেন। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ইস্তিকরায, নং২৩৮৭]
তাদের এই রকম জঘন্য
কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কারণ মানুষের এই হক পৃথিবীতে আদায় না করা হলেও আখেরাতে আল্লাহর দরবারে তা অবশ্যই
আদায় করতে হবে। বরং আল্লাহ তা নিজে আদায়
করে দিবেন।
ঋণের যাকাতঃ
অর্থাৎ কেউ কাউকে ঋণ
দিলে এবং সেই ঋণ যাকাতের আওতায় পড়লে, যাকাত কাকে দিতে হবে? ঋণ গ্রহীতাকে যার কাছে সেই মাল আছে? না ঋণ দাতাকে? আসলে সেই অর্থ, দাতার নিকট থেকে
গ্রহীতার কাছে স্থানান্তর হয়েছে মাত্র। নচেৎ প্রকৃতপক্ষে তার মালিক দাতাই। সেই কারণে ঋণ দাতাকেই সেই মালের যাকাত দিতে হবে। তবে ইসলামী গবেষকদের নিকট বিষয়টির একটু ব্যাখ্যা রয়েছে, তা হলঃ ঋণ
গ্রহীতা যদি অভাবী হয়, যার কারণে সে সঠিক সময়ে ঋণ ফেরত দিতে অক্ষম কিংবা সক্ষম তবে টাল-বাহানাকারী , যার থেকে ঋণ আদায় করা কষ্টকর। এই
ক্ষেত্রে ঋণ দাতার প্রতি সেই মালের
যাকাত দেওয়া জরূরী নয়, যতক্ষণে তা তার হাতে না আসে। আর যদি
ঋনী ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে সক্ষম হয় তথা
সেই ঋণ পাওয়ার পুরো সম্ভাবনা থাকে, তাহলে যাকাতের সময়
হলেই ঋণ দাতাকে তার যাকাত আদায় করতে হবে। [ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি, ৯/১৯১, ফতোয়া নং
৯০৬৯]
তবে টাল-বাহানাকারীর
কাছ থেকে কয়েক বছর পর ঋণ পাওয়া গেলে বিগত সব বছরের যাকাত দিতে হবে না এক বছরের দিলেই হবে? এ ক্ষেত্রে উপরোক্ত ফাতাওয়া কমিটি
এক বছরের দিলেই হবে বলে ফাতওয়া
দিয়েছেন। [ ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী ফাতাওয়া
কমিটি,৯/১৯০]
ঋণ হতে আশ্রয় প্রার্থনা এবং ঋণ পরিশোধের দুআঃ
নবী (সাঃ) ঋণ হতে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি
আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, যা দেখে এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেনঃ আল্লাহর রাসূল! আপনি ঋণ থেকে
খুব বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থনা করেন? নবী (সাঃ) বলেনঃ
” إن الرجل إذا غرم حدّث فكذب و وعد فأخلف” – رواه البخاري
“মানুষ ঋণী হলে, যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করলে অঙ্গীকার ভঙ্গ করে।” [বুখারী, অধ্যায়ঃ ইস্তিকরায, নং ২৩৯৭]
তাই তিনি (সাঃ) বলতেনঃ
” أللّهمَّ! إنّي أعوذُ بِكَ مِنَ الكَسَلِ والهَرَمِ والمأثَمِ والمَغْرَمِ” – رواه مسلم
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা! ইন্নী আউযুবিকা মিনাল্ কাসালি, ওয়াল্ হারামি, ওয়াল্ মা’ছামি, ওয়াল্ মাগ্রাম॥
অনুবাদঃ ‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয়
কামনা করছি অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ হতে।”
[মুসলিম, অধ্যায়ঃ যিকর ও দুআ, নং৬৮৭১]
তিনি (সাঃ) আরো বলতেনঃ
” اللهم! إني أعوذ بك من الهم والحزن، والكسل، والبخل، والجبن، و ضلَع الدين، وغلبة الرجال” – رواه النسائي
উচ্চারণঃ “আল্লাহহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল্
হাম্মি ওয়াল্ হাযানি, ওয়াল্ আজ্যি ওয়াল্ কাসালি, ওয়াল্ বুখ্লি ওয়াল্ জুব্নি, ওয়া যালাইদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।”
অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা করছি, চিন্তা-ভাবনা, অপারগতা,অলসতা, কৃপণতা এবং
কাপুরুষতা থেকে। অধিক ঋণ থেকে এবং দুষ্ট লোকের প্রাধান্য
থেকে।’
[নাসাঈ, অধ্যায়ঃ ইস্তিআযাহ, নং ৫৪৭৮]
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় মৌলিক ইসলামী
ব্যাংকিং নীতিমালা (এবিবিএল):
- রিবা বা সুদ নিষিদ্ধকরণ: ইসলামী
ব্যাংকিংয়ে রিবা তথা সুদ আদান-প্রদান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
- টাকা হলো প্রচ্ছন্ন মূলধন: টাকা
কোন পণ্য নয়, বরং বিনিয়োগের
একটি মাধ্যম, মূল্যের ধারক ও
পরিমাপের একক। টাকা ক্রয় করার
ক্ষমতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। কোনো উৎপাদনশীল কার্যক্রম ব্যতিত এর ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। ইসলামী অর্থায়ণ
প্রকৃত অর্থনৈতিক কার্যক্রমের
মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টির পক্ষপাতি।
- ঝুঁকি বন্টণ: যেহেতু সুদ নিষিদ্ধ, তাই তহ্বিল সরবরাবকারীগণ ঋণদাতা না
হয়ে বিনিয়োগকারী হিসেবে গণ্য হন।
বিধায়, ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ ব্যবসায়িক
ঝুঁকি ভাগ করে নেয়।
- ফটকাবাজী নিষিদ্ধকরণ: ইসলামী
অর্থায়ন মজুদদারীকে নিরূৎসাহিত করে; পাশাপাশি চরম
অনিশ্চয়তা (গারার) ও জুয়ার
(মায়সির) সংমিশ্রণ আছে, এমন লেনদেনকে
নিষিদ্ধ করে।
- চুক্তির মর্যাদা রক্ষা : ইসলামী
অর্থায়ন গ্রাহকের সাথে চুক্তির বাধ্য বাধকতা ও তার হিসাব সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করাকে
পবিত্র দায়িত্ব মনে করে। এই বৈশিষ্ট্যটি
দ্যার্থ-বোধক তথ্য ও নৈতিক বিপত্তির ঝুঁকি কমায়।
- শরীয়াহ্ অনুমোদিত কার্যক্রম : শারীয়াহর
নীতি লংঘন করে না এমন ব্যবসায়িক খাতসমূহেই কেবল বিনিয়োগ করা হয়। উদাহরনস্বরূপ, মদ, জুয়া, তামাকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খাতসমূহে
বিনিয়োগ নিষিদ্ধ।
- সামাজিক ন্যায়বিচার : যে
কোন লেন-দেন, যা অবিচার ও
শোষণের দিকে ধাবিত করে তা নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উত্তম ঋণ
গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আবার সে
ঋণ যথা সময়ে যথাযথভাবে আদায় করারও তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর সতর্কবার্তাগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক
দান করুন। আমিন।
"সংগ্রহীত"