Monday, December 18, 2023

সদক্বা করার মান্নত প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান

জানের বদলে (হালাল পশুর) জানের দান, সদকা, কুরবানী করার মান্নত করা নিষেধ নয়। তবে উক্ত মান্নত দ্বারা কুরবানীর উপযুক্ত একটি সম্পূর্ণ জন্তু দান করা ওয়াজিব হবে। কেননা, কুরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আ. কর্তৃক তদীয় পুত্র ইসমাঈলের কুরবানীর পরিবর্তে পশু কুরবানী করার কথা উল্লেখ করে বলেন- وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ “আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু”। (সূরা সাফফাত, ১০৭ আয়াত)।

অনুরূপভাবে বিশিষ্ট তাবিঈ ইকরামা (রাহ.) থেকে বর্ণিত-

عن عكرمة ، أن ابن عباس كان أفتى الذي جعل عليه أن ينحر نفسه ، فأمره بمائة من الإبل قال : فقال ابن عباس بعد ذلك : لو كنت أفتيته بكبش لأجزأه أن يذبح كبشا ، فإن الله قال في كتابه : وفديناه بذبح عظيم

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) ফতওয়া দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তির ব্যাপারে, যে নিজের উপর নিজের জান যবেহ করা আবশ্যক করে নিয়েছে, তাকে (তার জানের পরিবর্তে দিয়াত বিধানের আলোকে) একশত উট যবেহ করার হুকুম করেন।

হযরত ইকরামা (রাহ.) বলেন, এ ঘটনার পরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, যদি আমি তাকে একটি দুম্বার ব্যাপারে ফতওয়া দিতাম, তাহলে তার জন্য একটি দুম্বা জবেহ করলেই যথেষ্ট হতো। কেননা, আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে বলেছেন– এবং আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু (একটি দুম্বার কুরবানীর নিয়ম প্রদান করলাম)। (তাফসিরে ইবন কাসীর- ১২/৪৪, মাকতাবাতু আওলাদিশ শাইখ)।

সুতরাং যে ব্যক্তি উক্ত মান্নত করবে সে একটি গরু কিংবা এক বছর বা তার চেয়ে বেশী বয়সী একটি ছাগল বা বকরী গরীব-মিসকীনদের দান করবেন অথবা তা কোন মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিং-এ দান করবেন। তার জন্য এভাবেই তার মান্নত পুরা করা ওয়াজিব।

উল্লেখ্য মান্নত শরিয়তে নিষেধ নয় বটে; তবে পসন্দনীয়ও নয়। শরিয়ত উদ্বুদ্ধ করে নফল সদকার প্রতি; মান্নতের প্রতি নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন- أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَوْمًا يَنْهَانَا عَنِ النَّذْرِ وَيَقُولُ ‏‏ إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الشَّحِيحِ রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন আমাদের মান্নত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, মান্নত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মান্নতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৩২৫)।

পক্ষান্তরে দান-সদকা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- بَاكِرُوا بِالصَّدَقَةِ ؛ فَإِنَّ الْبَلَاءَ لَا يَتَخَطَّى الصَّدَقَةَ “তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে। কেননা বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না”। (বাইহাকী ৭৩৭৪)।

মুফতী মনির হোসাইন কাসেমী-উম্মাহ ২৪ ডট কম।

Thursday, August 24, 2023

সাপে কাটলে করণীয়, বর্জনীয় এবং চিকিৎসা


সাপে কাটা গ্রামীণ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। যা প্রায়ই অবহেলিত এবং অপচিকিৎসার শিকার হয়। সাপের কামড়ের ঘটনাগুলো সাধারণত মে-অক্টোবর মাসে বেশি হয়ে থাকে। কারণ সময় বৃষ্টি হয় চারিদিকে প্রচুর পানি থাকে। তাই সাপ শুকনো জায়গার খোঁজে বাসা-বাড়িতে উঠে আসে। সেখানে কোনোভাবে মানুষের সংস্পর্শে এলে সাপ নিজেকে বিপদগ্রস্ত মনে করে দংশন করে।

বিষধর সাপে প্রধানত দুটি লম্বা, বাঁকানো নালিযুক্ত দাঁত থাকে। দাঁত দুটি উপরের চোয়ালের সাথে যুক্ত এবং মিউকাস পর্দা দ্বারা আবৃত। সাপের কামড়ের সময় দাঁতগুলো সামনের দিকে সামান্য সোজা হয়ে যায় এবং শিকারের দেহে প্রবেশ করে। লম্বা দাঁতের পাশাপাশি ছোট দাঁত থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে প্রায় ২৫-২৭ লাখ মানুষের শরীরে বিষ প্রবেশে প্রায় দেড় লাখের মৃত্যু ও প্রায় পাঁচ লাখ লোক অন্ধ ও চিরস্থায়ী পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি সরকারি এক গবেষণায় থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখেরও বেশি ( লাখ হাজার ৩১৭) মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় সাড়ে হাজারের বেশি ( হাজার ৫১১ জন) মানুষের। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২০ জন মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়।


দেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ২৪৪ জন সাপের কামড়ের শিকার হন। মারা যায় প্রায় জন। দুর্ঘটনার ভাগের এক ভাগ বিষাক্ত সাপের কামড়ে হয়ে থাকে। মোট আক্রান্তের ৯৫ ভাগই গ্রামের বাসিন্দা।

চিকিৎসা

সাপ হাতে বা পায়ে কামড়ালে আমরা সাধারণত আক্রান্ত অংশের ওপরে রশি বা গামছা দিয়ে টাইট করে বেঁধে রাখি। এটা একেবারেই ভুল প্রাথমিক চিকিৎসা। আলতোভাবে বাঁধা যেতে পারে বা ১০ মিনিট পর পর কয়েক মিনিটের জন্য বাঁধন খুলে দেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো আক্রান্ত হাতের বা পায়ের দুপাশে বাঁশের বা কাঠের ফালি দিয়ে তার ওপর আলতো করে বাঁধা, যেন নড়াচড়া কম হয়। এমনভাবে বাঁধতে হবে, যেন আক্রান্ত অঙ্গ কাপড়ের মাঝে কষ্ট করে একটি আঙুল ঢোকানো যায়। একটানা শক্ত করে বেঁধে রাখলে দীর্ঘক্ষণ রক্ত চলাচল বন্ধ থাকায় পচন ধরতে পারে। চিরতরে হারাতে হতে পারে হাত-পা। যে কোনো সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ সাপটি বিষধর ছিল কি না, কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না, রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। ডাক্তার যদি বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ দেখেন, তাহলে এন্টিভেনাম ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে থাকেন।

সাপে কাটলে আরো যা করবেন

সাপে কাটলে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে বসে থাকুন। আক্রান্ত অঙ্গ নাড়াচাড়া করবেন না। আক্রান্ত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলে, রক্তক্ষরণ হলে, চোখের পাতা পড়ে গেলে, ঘাড় শক্ত রাখতে না পারলে, হাত-পা অবশ হয়ে এলে শ্বাসকষ্ট হলে একটুও দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণত নির্বিষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত স্থানে সামান্য ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা অল্প ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকে।

যা মোটেও করা যাবে না

আক্রান্ত স্থান কাটা, দড়ি দিয়ে খুব শক্ত করে বাঁধা, আক্রান্ত স্হান থেকে মুখের সাহায্যে রক্ত বা বিষ টেনে বের করার চেষ্টা করা, আক্রান্ত স্থানে গোবর, শিমের বিচি, আলকাতরা, ভেষজ ওষুধ বা কোনো ধরনের রাসায়নিক লাগানো, অ্যান্টিহিস্টামিন ইনজেকশন প্রয়োগ করা, কার্বলিক অ্যাসিড-জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে দংশিত জায়গা পোড়ানো, গাছ-গাছড়ার রস দিয়ে প্রলেপ দেওয়া ইত্যাদি। 

সতর্কতা

রাতে ঘুমানোর আগে বিছানা ভালোভাবে পরীক্ষা করে সম্ভব হলে মশারি টানিয়ে বিছানার সাথে গুঁজে ঘুমাতে হবে। মাটিতে ঘুমানো পরিহার করতে হবে। ঘরের মধ্যে লাইফবয় সাবানের টুকরো, কার্বলিক অ্যাসিড দিয়ে সাপ প্রতিরোধ করা যায় না। এগুলোর কোনো কার্যকরী ভূমিকা নেই। প্রয়োজনে ঘরের চারিদিকে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিলে সাপের আনাগোনা কম হতে পারে। যেইসব বাড়ি ঘরে বর্ষাকালে বা বন্যার সময় সাপের আনাগোনা বেড়ে যায়, সেসব বাড়ি-ঘরের চারদিকে মাছ ধরার জাল দিয়ে ঘেরাও করে রাখলে সাপ ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না। রাতে বাইরের টয়লেটে যাওয়ার সময় অবশ্যই টর্চ ব্যবহার করতে হবে।

 

বাড়ির আশপাশে যেকোনো প্রকার ছোট-বড় গর্ত থাকলে তা বন্ধ করে দিতে হবে। বাড়ি ঘরের আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা; সাপ নিরিবিলি স্থান পেলে সেখানে আশ্রয় নিতে পারে, তাই ঘরের মধ্যে জিনিসপত্র মাটি থেকে একটু উঁচুতে রাখতে হবে। ঘরে যেসব স্থানে আমরা ধান-চাল রাখি, সেগুলো খাবার জন্য ইঁদুর চলে আসে। ইঁদুর শিকারের লোভে সাপও ঘরের মধ্যে চলে আসতে পারে। সুতরাং বসতভিটা ইঁদুর এবং ব্যাঙ মুক্ত রাখতে হবে। হাঁড়ি-পাতিল কিংবা মাটির কলস জাতীয় জিনিস খোলা না রেখে ঢাকনা ব্যবহার করতে হবে। কেউ যদি সর্প-দংশনের শিকার হয় ওঝা-বৈদ্যের কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে তাকে দ্রুত নিকটস্থ সরকারি সদর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

উৎসঃ অনলাইন।

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...