Friday, October 16, 2020

শেরপুর জেলার নামকরনের পুরোধা শের আলী গাজীর সংক্ষেপ ইতিহাস

বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশকাহনিয়া অঞ্চল বিজয় করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। কিংবদন্তী খ্যাত এই শাসকের নামেই দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর। তখনও শেরপুর রাজ্যের রাজধানী ছিল গড়জরিপা। তখন শ্রীবরদী, দেওয়ানগঞ্জ , ইসলামপুর ও গড়জড়িপারের সম্মিলিত নাম ছিল শেরপুর। আর শেরপুর রাজ্যের রাজধানী ছিল গড়জড়িপা।

বর্তমান গাজীর খামার ইউনিয়নের গিদ্দা পাড়ায় ফকির বাড়িতে শের আলী গাজীর মাজার এবং নকলা উপজেলার রুনী গাঁয়ে গাজীর দরগাহ অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে নাম হয় শেরপুর সার্কেল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেরপুরকে ৬১তম জেলা ঘোষণা করা হলেও তা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে শেরপুরকে মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত করে জেলার ৫টি থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। জমিদারি আমলে ১৮৬৯ সালে শেরপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়।

শের আলী গাজী ছিলেন শেরপুর পরগনার শেষ মুসলিম জমিদার। খ্রিষ্টিয় অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনায় দশকাহনীয়া বাজু’র জায়গীরদার হন গাজী বংশের শের আলী গাজী। এই খ্যাতিমান শাসক ২১ বছরকাল তার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। বিতর্কিত অন্যায় ষড়যন্ত্র মূলক এক অভিযোগে বাঙলার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর বিচারে পরম শ্রদ্ধেয় শের আলীর গাজীর জমিদারি বাতিল করে রামনাথ চোধুরীকে শেরপুর পরগনার জমিদারি দেয়া হয় । তিনি ছিলেন শেরপুর পরগনার প্রথম হিন্দু জমিদার। তার উত্তরসুরীরাই পরবর্তীতে ছিলেন শেরপুর পরগনার জমিদার। বর্তমান শেরপুর সদর উপজেলার গাজীর খামার ছিল শের আলীর গাজীর খামার বাড়ি। পরবর্তিতে তিনি ইসলাম প্রচারে বেরিয়ে পড়েন। তিনি শেরপুরের গাজীর খামারে ইস্তেকাল করলে তাকে গীদদা পাড়া ফকির বাড়িতে সমাহিত করা হয়। সেই থেকে প্রতিবছর ১ ফাল্গুন তার ওরশ পালন করে আসছেন স্থানীয়রা। শের আলী গাজীর ইন্তেকালের পর তাকে গাজীর খামারের এ স্থানটিই পরবর্তীতে শের আলী গাজীর মাজার হিসেবে পরিচিত লাভ করে। প্রতিবছর ১ ফাল্গুন তার মাজার প্রাঙ্গনে বসে জমজমাট গ্রামীণ মেলা। ওরশ ও মেলায় জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মাজার ভক্ত পাগল, আশেকান এবং নানা ধরনের মানতকারী ভীড় করেন । নকলা উপজেলার পুর্বদিকে রুনী গাঁয়ে শের আলী গাজীর একটি দরগা ছিল। বর্তমানে এটি গাজীর দরগা হিসেবে পরিচিত।

১৭৯০ সালে ময়মনসিংহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর ডব্লিউ রাটন শেরপুরের এই জমিদারদের সঙ্গে দশসনা বন্দোবস্ত সম্পাদন করেন। পরবর্তীতে ষ্টিফেন বায়ার্ডের সঙ্গে তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়।

১৮২০ সালে শেরপুরের চোধুরীদের ষোলআনী জমিদারি প্রথমে নয়আনী ও সাত আনীতে ভাগ হয়। পরে সাতআনী বিভক্ত হয় তিনআনী, পনে তিনআনী, আড়াইআনী বড় বাড়ি, আড়াইআনী ছোট বাড়ি ও দেড়আনী বাড়িতে। আজ নেই জমিদার, নেই তাদের জমিদারি। আছে শুধু কিছু স্মৃতি চিহ্ন। সংরক্ষনের অভাবে সেগুলোও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।

“নাও, ঘোড়া এবং নারী যখন যার হাতে যায় তারই” কথা বলে কথা কিন্তু সত্য। নারীর লোভে কেউ হারায় সিংহাসন, কেউ হারায় জমিদারি আবার কেউ হারায় প্রাণ। শেরপুরের জমিদার শের আলী গাজীর জীবনে পদ্মবতীর আগমন ও বিচ্ছেদ এ রকম ঘটনা।

মুর্শিদাবাদ সরকারের অধিনস্ত শেরপুর অঞ্চলের জমিদার শের আলী গাজী। গাজী শের বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী। তার নামানুসারে জেলার নামকরণ হয় শেরপুর। সম্পূর্ণ স্বাধীন চেতনার পুরুষ ছিলেন শের আলী গাজী। মুর্শিদাবাদ সরকারের অধিনতা ছিন্ন করে স্বাধীন ভাবে শেরপুরের জমিদারি শুরু করেন। গাজী শিকার করতে এবং ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন। শিকারের উদ্দেশ্যে নদী পথে একদিন নৌকা নিয়ে বের হলেন। যেতে যেতে নদী তীরবর্তী “দর্শা” গ্রামে (ঘাটে) নৌকা থামে। ঘাটে এক অপরূপা সুন্দরী নাম তার পদ্মবতী। তাকে দেখে বিমুগ্ধ হলেন নৌকারোহী শের আলী গাজী। সে সময় অল্প বয়সে বিয়ে হতো মেয়েদের। পদ্মবতীর বেলায় বিকল্প হয়নি। ইতিপূর্বে পদ্মবতীর বিয়ে হয় রামভল্লব নন্দীর সাথে। পদ্মবতীর স্ব-ইচ্ছায় শের আলীর সাথে প্রেম হয় এবং তাদের প্রেমের বিবাহ ও মিলন হয়। কিন্তু তাদের সুখ বেশি দিন টিকেনি। শুরু হয় তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। গাজীর বিরুদ্ধে পরস্ত্রী হরণ, জেনা এবং রামভল্লব হত্যার মিথ্যা অভিযোগ আনে পদ্মবতীর নিকট আত্মীয় হিন্দুরা। মুর্শিদাবাদ নেজামতে গাজীর বিচার হয় এবং বিচারের রায় হয় গাজীর প্রাণ দন্ড। 
 
সংগৃহীত - মোঃ নাজিমুল হাসান খান

কিভাবে যাবেন:-

সড়ক পথে ঢাকা হতে শেরপুরের দূরত্ব 198 কিলোমিটার। ঢাকার মহাখালি বাস স্টেশন/গুলিস্থান থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে শেরপুর আসা যায়। ভাড়ার হার 300-400 টাকা। উপজেলা শেরপুর সদর হাসপাতাল রোড থেকে সিএনজি / অটোরিক্সা করে গাজির খামার আসা যায় প্রতি জন ভাড়ার হার 4০-50 টাকা। গাজির খামার বাজার থেকে শের আলী গাজীর মাজার শরীফ এ যেতে ১০-২০ টাকা নিবে।

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস

আন্তর্জাতিক সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে   একটি জাতীয় দিবস। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতি বছরের ১৫ ই অক্টোবর দিবসটি...